মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সবাইকে পানিসম্পদ অপচয় রোধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাইকে পানিসম্পদ অপচয় রোধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পানির অপর নাম জীবন। কাজেই পানিসম্পদ রক্ষা করা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। সবাইকে পানিসম্পদ অপচয় রোধ করতে হবে।

গতকাল সকালে বিশ্ব পানি দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে গ্রিন রোডের পানি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থেকে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি যত কম ব্যবহার করা যায়, ভূ-উপরিস্থ পানি যত বেশি ব্যবহার করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা নিজেরা সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতেও যখন বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে, এ বিষয়টি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, উপজেলা পর্যায়ে আমরা পাইপের মাধ্যমে পানি পরিশুদ্ধ করে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এগুলো করতে অনেক খরচ হয়। তাই পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেটা নির্মাণ কাজ, গাড়ি ধোয়ার কাজ, গৃহস্থালি, রান্না বা যে কোনো কাজেই ব্যবহার করা হোক। সব ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পানিসম্পদ অপচয় করলে শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পদই থাকে না। কাজেই আমাদের এ অমূল্য সম্পদ আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারি, ভবিষ্যৎ বংশধর ব্যবহার করতে পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি যেন ভূগর্ভে চলে যেতে পারে, তাতে ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ব্যবহার হবে, সেদিকে দৃষ্টি রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সব জায়গা আমরা সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দিলাম, আর বৃষ্টির পানি গড়িয়ে চলে গেল সেটা না, আবার বৃষ্টির পানি সব যে নদীতে পড়বে তাও নয়। আমাদের আশপাশের জলাধারে যেন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ থাকে, সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের নিতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকি। কারণ এদেশ আমাদের, মাটি ও মানুষ আমাদের। তাদের কল্যাণ এবং মঙ্গল কিসে হয়, শুধু আজকের জন্যই নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ দেশ যেন উন্নত এবং সমৃদ্ধ থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যখনই কোনো নগরায়ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, কোনো ভবন বা বাসস্থান নির্মাণ করা হবে, সবক্ষেত্রেই আমাদের দুটো বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। একটা হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা, আরেকটা হচ্ছে জলাধার থাকা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবহারে আমাদের বিশেষভাবে জোর দিতে হবে এবং সেভাবেই আমাদের কাজ করতে হবে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া একান্ত কষ্টকর। কিন্তু আমাদের বিশাল পানিসম্পদ রয়েছে। আমাদের এই সম্পদ যদি আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের মানুষের এ কষ্ট কোনো দিন হবে না, বরং আমরা বিশ্বকে পানি সরবরাহ করতে পারব। আমাদের সেই বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হবে। বন্যাকে আমাদের আপন করে নিতে হবে। বন্যার সঙ্গে বসবাস করার পদ্ধতি আমাদের শিখতে হবে। কারণ যেহেতু বাংলাদেশে বদ্বীপ। বন্যায় নদী ভাঙনসহ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, যার জন্য আমরা ড্রেজিংয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ড্রেজিং শুধু নদীর নাব্য বাড়াবে না, নদীর নাব্য যেমন বাড়াবে, আমাদের নৌপথগুলো সচল হবে। আমরা স্বল্পমূল্যে আমাদের পণ্য পরিবহন করতে পারব। দেশের নদ-নদীগুলো দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়াতে তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেহেতু তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে, নদীর বিশালতা বেড়ে গেছে, নদী অনেক চওড়া হয়ে গেছে, এত চওড়া নদী আমাদের প্রয়োজন নেই। এখানে বিভিন্ন পকেট তৈরি করে, নদীর ড্রেজিং করে, ড্রেজিং করা পলি সেখানে ফেলে আমরা কিন্তু ভূমি উত্তোলন করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমাদের চাষ উপযোগী জমি কখনো যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ড্রেজিং করা পলি যেন চাষ উপযোগী জমিতে না পড়ে, তার জন্য আলাদা পকেট নদীতেই করা যাবে। কারণ বিশাল চওড়া নদী আমাদের সব জায়গায় প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, উন্নয়ন দর্শনে আমরা নেচার বেইজড সল্যুউশনসের ওপর জোর দিয়েছি। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে প্রকৃতি নির্ভর ব্যবস্থাপনা কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর