বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসির সংলাপ

সব দলকে আনা ও একাধিক দিনে ভোটের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলকে ভোটে আনতে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থা তৈরিতে ইসিকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাগিদ দেন তারা। এ ছাড়া একাধিক দিনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের                সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করারও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই।

গতকাল ধারাবাহিক সংলাপের তৃতীয় ধাপে পত্রিকার সম্পাদক, কলামিস্ট ও সিনিয়র সাংবাদিকদের মতামত নেন কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। সিইসিও বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু করতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবেন তারা। সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রয়াসের কোনো ত্রুটি থাকবে না। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকালে দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপ চলে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবর্তে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করাটাই ইসির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আপনাদের সিদ্ধান্ত হলো- নির্বাচনের দায়িত্ব আপনার, সেটা সুষ্ঠুভাবে করেন, সেখানে সব দল অংশগ্রহণ করার মতো সাহস, উৎসাহ, আস্থা পাবে- সেটাই আপনারা তৈরি করবেন। তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো কতটুকু সুষ্ঠুভাবে করতে পারবেন, তার ওপর ইসির সার্থকতা আসবে।

নতুন ইসিকে উদ্দেশ করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, ইসির নিজেদের কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করবেন কী করতে চান। সবই আছে ইসির। ক্ষমতা আছে, দায়িত্ব আছে, জনগণ পাশে আছে, মিডিয়া রয়েছে। তাহলে ভয় কীসের? সংলাপের মধ্য দিয়ে যত না আস্থা সৃষ্টি করতে পারবেন, তার চেয়ে বেশি পারবেন কাজ দিয়ে। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান জানান, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে নির্বাচনে থাকতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার কমিশনকে করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর জানান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে পাকিস্তানিরা মানেনি বলে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ছিল না। তিনি জানান, বর্তমান ইসির হারাবার কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেন তিনি। যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, নির্বাচনে সব দলকে আনতে অনবরত চেষ্টা করতে হবে কমিশনকে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এক দিনে ভোট না করে বিভাগওয়ারি ভোট করার পরামর্শ দেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। সব দলের অংশগ্রহণ কীভাবে নিশ্চিত করা ও আস্থা অর্জন করার তাগিদ দেন বাংলাদেশ  জার্নাল সম্পাদক শাহজাহান সরদার।

জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন জানান, জাতির প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ইসির সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থার সংকট থেকে উত্তরণ, মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা। এ জন্য এই ইসির অধীনে প্রথম যে নির্বাচন হবে সেটা অ্যাসিড টেস্ট। এটি যদি ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তবে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে যাতে সব দল অংশগ্রহণ করে সেই উদ্যোগ থাকতে হবে। এ ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠান হয় আমরা সবাই সেই দিকে তাকিয়ে আছি।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বর্তমান কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা। যে কোনো একটি নির্বাচন তাদের জন্য অ্যাসিড টেস্ট হবে। তারা প্রথমেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এটাকে আমরা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছি। এ ছাড়া সংলাপে অংশ নেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, আজকের পত্রিকা সম্পাদক মো. গোলাম রহমান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক, ডেইলি অবজারভারের অনলাইন ইনচার্জ কাজী আবদুল হান্নান, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ, ভোরের ডাক সম্পাদক কে এম বেলায়েত হোসেন, প্রতিদিনের সংবাদ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, আমার সংবাদ সম্পাদক হাশেম রেজা।

অংশগ্রহণমূলক ভোট করতে করতে সর্বশক্তি : সিইসি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু করতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে সিইসি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, আজকে (সংলাপে) আমরা সব শুনেছি, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবার মতামত পর্যালোচনা করব। সাংবিধানিকভাবে আইন ও বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রয়াসের কোনো ত্রুটি থাকবে না। সর্বপ্রয়াস, সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন করার চেষ্টা করব। তিনি জানান, উইল ফোর্স নিজে নিজে সৃষ্টি করতে পারব না। সবার পরামর্শ, অনুপ্রেরণা থেকেও উইল ফোর্স সৃষ্টি হয়। সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসির বৈঠকে ২৩ জন অংশ নিয়েছেন। এ সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, রাশেদা সুলতানা এমিলি, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর