আজ মাহে রমজানের অষ্টম দিন। ফুরিয়ে আসছে রহমতের দশক! হে আদমসন্তান! এখনো যার হুঁশ হয়নি, এখনো যে খোদার ক্ষমার ডানার নিচে আশ্রয় নেয়নি তার জন্য আরও দুটি রাত বাকি আছে। রহমতের ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ কার হাতছাড়া হয়ে গেল? মাগফিরাতের সমুদ্রে ডুব দেওয়ার আনন্দ থেকে কে বঞ্চিত হলো? নাজাতের মিষ্টি বাতাস কে গায়ে মাখল না? রমজান শেষে যখন শাওয়াল আসবে তখন হে পাঠক তুমি যেন এ তিন প্রশ্নের উত্তরে ‘আমি’ না বলো। এখনো রহমতের দুটি রাত বাকি। তুমি চাইলে এ দুটি রাত মনের মাধুরী মিশিয়ে রহমত উপভোগ করতে পার। বাকি আছে আরও দুটি দশক- মাগফিরাত, নাজাত। তিনটি দশক থেকেই লাভবান হওয়ার সুযোগ তোমার এখনো আছে। তবু যদি শাওয়ালে আমার প্রশ্নের উত্তরে তুমি ‘আমি’ বলে দাও, তাহলে তোমার চেয়ে পোড়া কপাল আর কেউ হবে না বন্ধু! হে আল্লাহ! আমার পাঠক বন্ধুটিকে তুমি কবুল করে নাও। তার কঠিন মনে কোমল হাত বুলিয়ে দাও। রাতের গভীরে উঠে তোমার কুদরতি পায়ে সিজদা দেওয়ার তৌফিক তাকে দাও। দিনের আলোয় কণ্ঠে যেন ফোটে কোরআনের ফুল এমন সৌভাগ্যবান বান্দা হিসেবে তুমি আমার ভাইকে কবুল কর।
এত করে তোমার জন্য কেন দোয়া করলাম জানো! আসলে দোয়া করেছি তোমার জন্য, কবুল হয়েছে আমার জন্য। এটি রসুলে আরাবির ঘোষণা। তিনি বলেছেন, ‘কোনো মুমিন যখন তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, ভালো বিষয়ের প্রার্থনা করে আল্লাহ আগে দোয়াপ্রার্থীর জন্য তা কবুল করেন, তারপর ভাইয়ের জন্য কবুল করেন।’ অন্যের জন্য দোয়া করার এই হলো বড় ফায়দা। তুমি হে পাঠক! যদি নিজের মঙ্গল চাও, ভালো চাও তাহলে এই আমাকেও তোমার দোয়ায় শামিল রেখ। রাতের জায়নামাজে ভেজা চোখে আল্লাহকে বোলো, তোমার এই না-দেখা বন্ধুকে যেন তিনি বিনা শর্তে ক্ষমা করে দেন। বিশেষ করে একটি দোয়া কোরো বন্ধু, আল্লাহ যেন সব সময় তাঁর গোলামের প্রতি রাজি-খুশি থাকেন। তিনি যেন একটি মুহূর্তের জন্য তাঁর রহমত থেকে আমাদের মাহরুম না করেন। আসলে আল্লাহর রহমত থেকে যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ সময়ের জন্য মাহরুম হয়ে যায় তার দুনিয়া-আখিরাত দুটিই ধ্বংস হয়ে যায়। অন্যের জন্য দোয়া করলে সে দোয়া নিজের জন্য কবুল হওয়ার রহস্য খুব গভীর। মূলত রসুল (সা.)-এর একটি কথাকে সম্মান দিতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা এমনটি করেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘বিশ্বাসীরা পরস্পর ভাই ভাই।’ অন্য বর্ণনায় বলেছেন, ‘বিশ্বাসীরা একটি দেহের মতো। দেহের কোথাও যদি ব্যথা লাগে তাহলে পুরো দেহই কাতর হয়।’ উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে রসুল (সা.) ভাইয়ের সূত্রে আমাদের আবদ্ধ করে গেছেন। স্বার্থপর মানুষ অন্যকে ভাই ভাববে এটি সহজ কাজ নয়। তাই উম্মতের মনে যেন ভ্রাতৃত্বের প্রেম জেগে ওঠে তাই নবী (সা.) আল্লাহকে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমার যে উম্মত তার অন্য ভাইয়ের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করবে, তুমি সে প্রার্থনা আগে দোয়ারত উম্মতের জন্য কবুল কর।’ পাঠক! তুমি যখন আমার জন্য আর আমি যখন তোমার জন্য দোয়া করব এবং এ চর্চা কিছুদিন চলতে থাকবে এরপর তোমার সঙ্গে যখন আমার দেখা হবে তখন কি আমরা আর অপরিচিত থাকব।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি