শিরোনাম
সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
খুনোখুনি সহিংসতা

নৌপুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলে নিহত, আহত ১৪

ভোলা ও লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে মাছ ধরার সময় নৌপুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক জেলে নিহত হয়েছেন। নিহত জেলের নাম আমির হোসেন রাঢ়ী (২৫)। তার বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামে। এ সময় চার নৌপুলিশ সদস্য এবং ১০ জেলে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তাদের স্বজনরা জনিয়েছেন। শনিবার রাতে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী মেঘনায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছে না নৌপুলিশ। আহত ব্যক্তিদের পারিবারিক সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১০টার পর ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে জাল ফেলে অপেক্ষা করছিলেন ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনির চৌকিদারের ট্রলারের ১১ মাঝিমাল্লা। এ সময় লক্ষ্মীপুর নৌপুলিশের একটি টহল দল জেলেদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে জেলে আমির হোসেন রাঢ়ী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় ট্রলারের সবাই আহত হন। নিহত আমির হোসেনের প্রতিবেশী ইউসুফ জানান, গুলিবিদ্ধ আমিরকে ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথায় গুলি লেগেছিল। আমিরের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ হস্তান্তর করা হবে।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আমির চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের মতলব রাঢ়ীর ছেলে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে।

এদিকে আহতদের স্বজনরা জানান, আহত সবুজ, মনির চৌকিদার, মোসলেহ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, সায়েদুল ইসলাম, মোক্তার জমাদার, সবুজ মাঝি, জহিরুল ইসলাম, মো. ইমরানসহ ১০ জন লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের সবার বাড়ি রাজাপুর ইউনিয়নে। আহত জেলেদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপুলিশের এসপি কামরুজ্জামান।

পুলিশের গুলিতে জেলে নিহত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে চাঁদপুর অঞ্চল নৌপুলিশের এসপি কামরুজ্জামান জানান, মজুচৌধুরীর ঘাট এলাকার মেঘনায় জেলেরা নৌপুলিশের ওপর হামলা করে। এ সময় জেলেদের ইটপাটকেল ও লগি-বৈঠার আঘাতে নৌপুলিশের বেসরকারি মাঝিসহ পাঁচজন নৌপুলিশ আহত হন। পরে আত্মরক্ষার্থে নৌপুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে।

এসপি কামরুজ্জামান জানান, ট্রলারের ১১ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। এদের মধ্যে একজনের মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তিনি মারা যান। ময়নাতদন্তের পর ওই জেলের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় ১০ জেলেকে আটক করেছে পুলিশ।

নৌপুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জাটকা সংরক্ষণে মেঘনায় দুই মাস মাছ ধরা বন্ধের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে শনিবার দিবাগত রাতে নৌপুলিশ নদীতে অভিযানে নামে। ভোররাতে টহল পুলিশ ঘটনাস্থল এলাকায় পৌঁছালে পাঁচ-ছয়টি মাছ ধরার ট্রলার তাদের ঘেরাও করে ফেলে। এ সময় ৫০-৬০ জন জেলে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল (জালের কাঠি) নিক্ষেপ করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি চালায়। এতে আমির হোসেন নামে এক জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনায় আহত হন পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম, মহসীন, আনোয়ার, মোবারক ও পুলিশের স্পিডবোটের চালকসহ পাঁচজন। পরে আহতদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গুলিবিদ্ধ জেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর সকালে তিনি মারা যান।

সর্বশেষ খবর