সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ইমরানের বিদায় লোভের রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইমরানের বিদায় লোভের রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়

ড. দেলোয়ার হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের মতে, ইমরান খানের বিদায়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট দূর হচ্ছে বলে মনে হয় না। কারণ পাকিস্তান জন্মের পর থেকে অর্ধেক সময় সামরিক শাসনের অধীনে ছিল, আর কোনো সরকারই তার মেয়াদ পূরণ করতে পারেনি। এই দুটি তথ্যই বলে দেয় পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট এবারও দূর হচ্ছে না। পাকিস্তানে ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ধরে নেওয়া হচ্ছিল, ইমরান খান তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করতে পারবেন। কিন্তু একটি আকস্মিক বাস্তবতায় তা আর হলো না। পাকিস্তানের পুরনো দুটি রাজনৈতিক দল আছে যারা ঐতিহাসিকভাবেই নিজেদের মুখোমুখি অবস্থান করে। তারাই এবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিল। আবার পাকিস্তানে শুধু রাজনৈতিক দলই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেখানে সেনাবাহিনী, বিচারবিভাগ সব সময়ই বড় ভূমিকায় থাকছে। ইমরান খানও যে সামরিক বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষমতায় এসেছিল, সেই সামরিক বাহিনীর ভূমিকাতেই তাঁকে চলেও যেতে হলো। অবশ্য তাঁর চলে যাওয়ার  পেছনে অনেক শক্তির স্বার্থ রক্ষা না হওয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মধ্যে ইমরান খান নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইমরান খানের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে তাঁর মস্কো সফর এবং যুদ্ধ শুরুর পর ভোটদানে বিরত থাকা এ ক্ষেত্রে অন্যরকম ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের নতুন যে সরকার আসতে যাচ্ছে তারা দেড় বছরের মতো সময় পাবে। তবে তারাও এই দেড় বছরের মেয়াদ পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। তারাও এর আগেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ম্যান্ডেট চাইতে বাধ্য হবেন কি না এ নিয়ে চিন্তার বিষয় আছে।

ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধী বা সহচররা যাই বলুক পাকিস্তানের রাজনীতির তৃতীয় শক্তি হিসেবে ইমরান খানের যে আবির্ভাব হয়েছে তা এবার আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিরাজ করা পশ্চিমা বিরোধী জাতীয়বাদকে তিনি সফলভাবে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এমনিতেই তরুণ ও নারীদের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ছিল এখন তা আরও ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে।

অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, নানামুখী ঘটনাপ্রবাহে পাকিস্তান এমন পরিস্থিতিতে চলে গেছে এটির পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ, সামরিক বাহিনীর বৈরিতা ও আন্তর্জাতিক মহলের কূটকৌশলের বাইরেও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটাও প্রকট। যে বিশাল ঋণের বোঝা পাকিস্তানের ওপর রয়েছে তার ব্যবস্থাপনাও একটি জটিল বিষয়। এর ওপর রয়েছে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। কারণ যারা ইমরান খানের পশ্চিমা বিরোধী অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে তাদের ক্ষমতার মেয়াদে তাদের প্রতি রাশিয়া ও চীনের মনোভাব কী হয় সেটাও দেখার বিষয়। ভারতের সঙ্গে বিরোধে থাকা পাকিস্তানের কোনো সরকার চীনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কতটা এগোতে পারবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানে ইমরান খানের বিদায় আসলে বিরোধীদের লোভের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ পশ্চিমা বিরোধী যে অবস্থান ইমরান খান নিয়েছিলেন, তা পাকিস্তানের সমসমায়িক রাজনীতিতে খুব অচেনা কিছুই ছিল না।

সর্বশেষ খবর