সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রোজাদারের জন্য সাজানো বেহেশত

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রোজাদারের জন্য সাজানো বেহেশত

প্রতিটি ইবাদতেরই একটি উদ্দেশ্য থাকে। সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য হলো, বান্দার মাঝে ইলাহি সিফাতের সমাবেশ ঘটানো। আল্লাহ যেমন খানাপিনা, ঘুমতন্দ্রা থেকে মুক্ত, তেমনি বান্দাও খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে আল্লাহর সিফাতি নূরের তাজাল্লি অনুভবের যোগ্য হয়ে ওঠে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে। উলামারা বলেন, রোজা এমন এক বরকতময় ইবাদত, যার সঙ্গে অন্য কোনো ইবাদতেরই তুলনা হয় না। রোজাদারের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ পুরস্কার ও মর্যাদা। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছ থেকে মানুষের আমল বা কাজ সাত রকমের। দুই রকমের কাজ এমন যে, তার দুটো অনিবার্য ফল রয়েছে। আর দুই রকমের কাজ এমন যে, তার ফল কাজের সমান। আর এক রকমের কাজের দশগুণ সওয়াব রয়েছে। আর এক রকমের কাজের সওয়াব সাতশত গুণ। আর এক রকমের কাজের সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। প্রথম দুটো হলো : যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করে, কাউকে তার সঙ্গে সমকক্ষ করে না এবং এ অবস্থায় আল্লাহর কাছে উপস্থিত হয়, তার জন্য জান্নাত অনিবার্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা অবস্থায় তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছে, তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য। যে ব্যক্তি কোনো খারাপ কাজ করে সে তার এক গুণ শাস্তি পায়। আর যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু কাজটি করে না- সে ওই কাজ করার এক গুণ সাওয়াব পায়। আর যে ব্যক্তি ভালো কাজ সম্পাদন করে, সে তার কাজের সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব পায়। আর রোজা আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে। এর সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। (তাবারানি ও বায়হাকি।)

ইবাদতের মধ্যে সিয়ামই এমন একটি ইবাদত যা পালন করতে বাহ্যিক কোনো সুরতের প্রয়োজন হয় না। নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে মসজিদে যেতে হয়, একটি নির্দিষ্ট নিয়মে দাঁড়াতে হয়, ওঠাবসা করতে হয়, মানুষ দেখে, দেখার সুযোগ থাকে। হজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। জাকাত দিতে হলে অন্য মানুষ আপনার থেকে জাকাত নেবে। সে আপনার জাকাতের বিষয়টি জানবে, দেখবে। রোজাই একমাত্র ইবাদত, যা করতে অন্য কারও সাহায্য লাগে না, অন্য কেউ জানে না। মানে এখানে রিয়া বা লোক দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। আপনি সারা দিন যার সঙ্গে কাজ করেন, তাকে যদি মুখ ফুটে না বলেন তাহলে সে জানতেও পারবে না আপনি রোজাদার। রোজা একান্তই আপনার ইবাদত। আপনার আর আপনার প্রভু ছাড়া কেউ জানবে না আপনি রোজাদার। হ্যাঁ! কেউ যদি রোজা না রেখেও রোজার ভান করে বা বলে বেড়ায় আামি রোজাদার, আমি রোজাদার, সেটা ভিন্ন কথা। সে তো রোজার মানেই বুঝল না।

এই যে আপনি একান্তভাবে রোজা রাখছেন, শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানা-দেখার সুযোগ রইল না; ঠিক এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন, ‘আদম সন্তানের সব আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে রোজার কথা ভিন্ন। রোজার প্রতিদান কত বাড়াব কী দেব সেটা শুধু আমিই জানি। আসওমু লি ওয়া আনা আজযি বিহি। বান্দা রোজা রাখে শুধু আমার জন্যই। কেননা, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে রোজা রাখার সুযোগ নেই। কেউই জানবে সে উপায়ও নেই। রোজা আমার জন্য। আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব। আরেকটি অনুবাদ হতে পারে এ রকম- রোজা আমার জন্য, আমিই রোজার পুরস্কার।’

রসুলেপাক (সা.) আরও বলেছেন, রমজান মাসে আমার উম্মাতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবী কিংবা নবীর উম্মতকে দেওয়া হয়নি। প্রথমটি হলো, রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহতায়ালা যার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি দেন না। দ্বিতীয়ত, সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। তৃতীয়ত, রমজানের প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করে। চতুর্থত, আল্লাহ তাঁর বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও। আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। পঞ্চমত, রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বলল, এটা কি লাইলাতুল কদর? রসুলপাক (সা.) বললেন, না, তুমি দেখনি, শ্রমিকরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়। (শুআবুল ইমান)

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

 

সর্বশেষ খবর