মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী রাজপথে ইমরান

জাতীয় পরিষদের ১৭৪ সদস্যের সমর্থন শাহবাজকে ১৫৫ সদস্য নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা ইমরানের পাকিস্তানজুড়ে সমর্থকদের ব্যাপক বিক্ষোভ

প্রতিদিন ডেস্ক

শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী রাজপথে ইমরান

পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মুসলিম লীগ (নওয়াজ) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। তিনি দুর্নীতির দায়ে দেশ থেকে বিতাড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। এদিকে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রত্যাখ্যান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে পাকিস্তান জুড়ে বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করে চলেছেন। ব্যাপক এই বিক্ষোভকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইমরান খান নিজেও রাজপথে বিক্ষোভে অংশ নেবেন বলে তার দলের নেতারা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ইমরান তার দলের ১৫৫ জন  জাতীয় পরিষদ সদস্যকে নিয়ে গণপদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

জিইও এবং ডন-এর খবর অনুযায়ী, গতকাল পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটাভুটিতে ১৭৪ জন সদস্য শাহবাজের পক্ষে রায় দিয়েছেন। নির্বাচনী দৌড়ে শাহবাজের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কোরেশি। কিন্তু কোরেশিসহ পিটিআইয়ের সব সদস্য অধিবেশন বয়কট করায় কার্যত শাহবাজের জন্য মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। পার্লামেন্টের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনই একমাত্র কর্মসূচি ছিল। এ লক্ষ্যে বিকালে পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের অধিবেশন শুরুর আগেই সংসদ থেকে গণপদত্যাগের ঘোষণা দেয় সদ্য প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো ইমরান খানের দল পিটিআই। এর আগে ইসলামাবাদের সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। সেখানেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় ইমরান খান  বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই এই বিধানসভায় বসব না। পিটিআই পাকিস্তান ডাকাতি করেছে। বিদেশি শক্তি যাদের আমদানি করেছে- তাদের সঙ্গে বিধানসভায় আমরা বসব না। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সরকারকে দেশ চালানোর দায়িত্ব দিচ্ছে, তাদের চাপে রাখতেই আমরা এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’ এরপর পদত্যাগ করেন ফারুখ হাবিব, আলী জাইদি, মুরাদ সাইদ, শিরিন মাজারি, শাফকাত মাহমুদ এবং আলী মোহাম্মদ খান।

পাকিস্তান জুড়ে লাখ লাখ মানুষের মিছিল : পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রত্যাখ্যান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করছেন। ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিকে ইনসাফ পার্টির আয়োজনে গত রবিবার রাজধানী ইসলামাবাদের পাশাপাশি করাচি,  পেশোয়ার ও লাহোরসহ অন্যান্য বড় শহরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সারারাত ধরে এ বিক্ষোভ চলে। গতকাল সকাল থেকে সারা দেশে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে- যা আগে কখনো হয়নি। প্রত্যেক স্থানে লাখ লাখ মানুষের একটাই স্লোগান ছিল- বিদেশি ষড়যন্ত্র মানি না, ইমরান খানের অপসারণ মানি না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস হোক- ইত্যাদি। এর আগে ইমরান খান ঘোষণা দেন, ‘আজ থেকে দেশের স্বাধীনতার জন্য নতুন লড়াই শুরু হলো। বিদেশিদের পদলেহীরা যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ এ লড়াই চলবে।’ বিক্ষোভাকারীদের সমাবেশ থেকেও অভিন্ন কথা বলা হয়। তারা বলেন, পাকিস্তানের জনগণ কখনো বিদেশ থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনো সরকারকে মেনে নেবে না।

রবিবার রাতে ইমরান খান এক টুইটার বার্তায় তার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে উল্লেখ করেন, দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে স্বাধীন করতে গিয়ে তিনি মার্কিন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের আসন্ন সরকার হবে ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা’ এক সরকার এবং এর প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন থাকবে না।

ঈদের পর ফিরছেন নওয়াজ শরিফ : দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফ ঈদুল ফিতরের পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন। দেশটির নতুন সরকারের মেয়াদ ছয় মাসের বেশি হবে না। পিএমএল-এন নেতা মিয়া জাভেদ লতিফ রবিবার এ কথা বলেন। তবে নওয়াজ শরিফের মুখপাত্র মুহাম্মদ জুবায়ের পিএমএল-এনের সর্বোচ্চ নেতার দেশে ফেরা নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ পর্যায়ে এ নিয়ে কোনো কিছু  যাবে না।’

খবরে বলা হয়, এই প্রথম সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের দেশে ফেরা নিয়ে কথা হচ্ছে- বিষয়টি তেমন নয়। এর আগেও জাভেদ লতিফসহ অনেক পিএমএল-এন নেতা একই ধরনের দাবি করেছেন। ইমরান খান সরকার উৎখাতের পর নওয়াজের দেশে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন আরও বেড়েছে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নওয়াজ আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর তিনি আর ফেরেননি। জাভেদ লতিফ বলেন, নওয়াজের সম্ভাব্য দেশের ফেরা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হবে। সব সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথমে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে।

দেশের বহু সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, চলমান এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান নতুন নির্বাচন। তবে নির্বাচনের আগে নির্বাচনী সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার কাজ রয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ফারহাতুল্লাহ বাবর বলেন, নতুন নির্বাচনে যেতে জোট সরকারের কমপক্ষে সাত মাস সময় লাগতে পারে। ভোট গ্রহণে প্রস্তুতির জন্য নির্বাচন কমিশন যে সময় চেয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই তিনি এই সময়সীমার কথা বলছেন। এই কয়েক মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে, যা তাদের জন্য প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ।

কে এই নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ : পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তার পুরো নাম মিয়া মুহাম্মদ শাহবাজ শরিফ। তিনি পাকিস্তানের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই ও দেশটির ঘরোয়া রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি খুব একটা পরিচিত নন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। তিন দফায় ১২ বছর ধরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এই শাহবাজ। প্রদেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি মুখ্যমন্ত্রীও তিনি। প্রথমে ১৯৯৭-১৯৯৯ ও পরবর্তীতে দুই দফায় টানা ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার হন শাহবাজ ও পরবর্তীতে তাকে সৌদি আরবে নির্বাসিত করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

২০১৭ সালে প্রকাশিত পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নওয়াজ শরিফের নাম জড়ানোর পর শাহবাজ পিএমএল-এনের সভাপতি হন। এর মধ্য দিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। কূটনৈতিক দিক থেকে শাহবাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক রাখার পক্ষে।

সর্বশেষ খবর