মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না : প্রধানমন্ত্রী

দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শক্তিশালী বিরোধী দল আমরা পাচ্ছি না। অপজিশন বলতে দুটো পার্টি আছে। দুটোই মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে গড়া। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান নেই। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অপজিশন বলতে যারা আছে তার মধ্যে দুটো পার্টিই এখন যারা (বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি), দুটোই হচ্ছে মিলিটারি ডিকটেটর- একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের হাতে গড়া। কাজেই তাদের ঠিক ওই মাটি ও মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কটা তাদের মাঝে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। সেই ক্ষেত্রে আসলে অপজিশন তাহলে কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে। শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আমরা আমাদের শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না। তাদের অবস্থানটা মানুষের কাছে নেই। কারণ তারা তো এসেছেই একটা ভাসমান অবস্থায়। কাজেই তাদের ওই শিকড় তারা গাড়তে পারেনি। সে ক্ষেত্রে আমাদের ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড থেকে যখন শোনায় যে এখানে ডেমোক্রেসি, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, ইলেকশন, হেনতেন; কিন্তু আসলে এখানে করবেটা কী। সেটাও তারা চিন্তা করে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বে দেখলে আপনারা দেখবেন, সেখানে কিন্তু মাত্র দুই দল হয়ে গেছে এখন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নাই। আবার নির্বাচনে আমি তো জানি আমেরিকার প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পেছনে থেকে তাদের উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পারে, যেটা ২০০১ সালে এনেছিল। কিন্তু তার পরিণতি কী ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫০০ জায়গায় এক দিনে বোমা হামলা, আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতা-কর্মীর ওপর হামলা। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর গ্রেনেড হামলা, কামরান মারা গেছে তার ওপর দুই বার গ্রেনেড হামলা হলো, হেলালের মিটিংয়ের ওপর হামলা, সেখানে নয়জন মারা গেল। এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সেই সময় সারা দেশজুড়ে। যার জন্য ইমারজেন্সি, তারপরে, এটা হলো বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাটা যদি মানুষকে ঘিরে হয়, মানুষের কল্যাণমুখী হয়, সেই রাজনীতি কিন্তু টিকে থাকে, সেটাই চলে।’

আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা সেই ১৯৪৯ সালে তৈরি। বিরোধী দল থেকে একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এ দলটা গড়ে তোলা। এ সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এলে এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়। কেন হয়? এজন্য হয়, মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এ সংগঠনটা তৈরি। কাজেই আমাদের চিন্তা চেতনাটা ওখানেই থাকে।

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে এ মতবিনিময় সভা। এতে অন্যান্যের বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিগত তিন বছরের কাজের ওপর একটি উপস্থাপনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য যতটুকু সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারির দুটি তরঙ্গের পর, এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব আরেকটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। তাই আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে এবং সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা উচিত নয় বরং আমরা যে যা করতে পারি তা উৎপাদন করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব সংকটের কারণে দেশ যাতে কোনো সংকটের সম্মুখীন না হয় সেজন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই বার্তা প্রচার করার আহ্বান জানান যে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না।

সর্বশেষ খবর