মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শাহজালালে দুই বিমানের ধাক্কা ফ্লাইট বাতিল

বিশেষ প্রতিনিধি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমান নিজেদের আরেকটি বিমানের লেজে ধাক্কা দিয়েছে। এতে দুটি বিমানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বিমানের বোয়িং-৭৩৭ এর সামনের অংশ  (নোজ) এবং বোয়িং-৭৭৭ এর পেছনের অংশ (টেইল/লেজ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত রবিবার বিকালে এ ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে বিমানে। ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শন শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উড়োজাহাজ দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রবিবার রাতে বিমানের দুবাই ফ্লাইট বাতিল করা হয়। যাত্রীদের গতকাল সকালে নতুন ফ্লাইটে দুবাই পাঠানো হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. আবু সালেহ্? মোস্তফা কামাল বলেন, কেন, কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটল তা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের হ্যাঙ্গারে আগে থেকেই একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা ছিল। রবিবার দুপুরে বিমানের আরেকটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হ্যাঙ্গারের দিকে নেওয়া হয়। হ্যাঙ্গারের ভিতরে প্রবেশ করানোর সময় ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশের সঙ্গে ভিতরে থাকা ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনের অংশে ধাক্কা লাগে। এতে দুটি উড়োজাহাজই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশে থাকা ওয়েদার র‌্যাডম নষ্ট হয়ে গেছে। আর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের লেজের ভার্টিকাল স্ট্যাবিলাইজার ভেঙে গেছে। সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। গতকাল দুপুরে তিনি উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শনে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে যান। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা তদন্তের নির্দেশ দেন।

বর্তমানে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ৪টি, বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ৩টি, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ৪টি, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ৬টি এবং ৫টি ড্যাশ-৮।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ৩টি মডেলের ১০টি নতুন বিমান ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে ক্রয়ের জন্য চুক্তি করে। ১০টি উড়োজাহাজের মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ অর্ডার করা হয়। পরে ২০১৯ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরও দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ক্রয় করে।

বিমানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় উড়োজাহাজ কেনা, লিজ নেওয়া, মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ কেনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরই উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। আর উড়োজাহাজ দুটি বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চ ও মে মাসে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় এ ইঞ্জিনটিও। আবারও ভাড়ায় আনা হয় ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও বিকল হয়। তারপর ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এভাবে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে নিট ক্ষতি ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে বিমান আয় করে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে দুটি উড়োজাহাজের পেছনে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পরে লোকসান দিয়ে উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেয় বিমান। অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ড থেকে ২০০৯ সালে ইজারায় নেওয়া পুরাতন দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ফেরত না দিয়ে কিনে নিয়েছে বিমান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লিজের উড়োজাহাজ ফেরত দেওয়ার খরচ ও জটিলতা এড়াতে এই কৌশল অবলম্বন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর