বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
টিআইবির গবেষণা

টিকা কার্যক্রম ব্যয়ে গরমিল ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিকা কার্যক্রম ব্যয়ে গরমিল ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দেশের কভিড টিকা কার্যক্রমের ব্যয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি গরমিল হয়েছে। টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা কেনা ও টিকা কার্যক্রমের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন টিকা কার্যক্রমে মোট ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রকৃত ব্যয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী-প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকের কম।

গতকাল ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন : অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরামের তত্ত্বাবধানে প্রণীত গবেষণাটি উপস্থাপন করেন একই বিভাগের রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাওসার আহমেদ। গবেষক দলের অন্য সদস্য একই বিভাগের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট রাবেয়া আক্তার কণিকা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল। গত বছরের জুলাইয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিকাপ্রতি ৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। চলতি বছরের ১০ মার্চ গণমাধ্যমে টিকা কার্যক্রমে মোট ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান। অথচ গবেষণায় দেখা যায় টিকা কেনা ও টিকা কার্যক্রমের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী-প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকের কম। আবার শুধু একটি দেশের ক্ষেত্রে টিকার ক্রয়মূল্য প্রকাশ না করার শর্ত থাকলেও অন্যান্য উৎস থেকে কেনা টিকার ব্যয় এবং টিকা কার্যক্রমে কোন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের পরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রম এবং করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গৃহীত প্রণোদনা কার্যক্রমে এখনো নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সাড়া প্রদান এবং সেবা সম্প্রসারণ করা হয়নি, যা ভবিষ্যৎ নতুন কোনো ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

 টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে- কভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে এখনো সুশাসনের বহুবিধ চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাক্সিক্ষত ফল অর্জন বাধাগ্রস্ত করছে। প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নেও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে প্রণোদনার সুফল প্রত্যাশিতভাবে পৌঁছায়নি। এ ছাড়া স্বচ্ছতার ঘাটতি একদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির ঝুঁকি তৈরি করেছে, অন্যদিকে সংঘটিত দুর্নীতি আড়াল করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২৬.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা কভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং ১৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এতে আরও বলা হয়েছে- যারা সরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা দিয়েছেন তাদের ১৪.৯ শতাংশকে নির্ধারিত ফি অপেক্ষা গড়ে ১১৬ টাকা, বাড়ি থেকে নমুনা দিতে গড়ে ৬৪২ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে গড়ে ৪ হাজার ৪২৫ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় নেগেটিভ সার্টিফিকেট পেতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে প্রত্যাগতদের গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে- কভিড-১৯ সংক্রমণের দুই বছরে পরীক্ষাগার ও আইসিইউ শয্যার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও তা অল্প কিছু জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখনো ৩৪ জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সুবিধা নেই। টিকা গ্রহণের সময় ১৫.৬ শতাংশ টিকাগ্রহীতা টিকা কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর