বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পোল্যান্ড থেকে খুলনায় নতুন মাদক ডিওবি

মাহবুব মমতাজী

খুলনা থেকে গত ২১ নভেম্বর ডিওবির একটি চালান জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। গ্রেফতার করা হয় আসিফ আহমেদ ও অর্ণব কুমার শর্মা নামের দুই তরুণকে। তাদের সহযোগী একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী মামুনুর রশীদকেও গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনায় রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় ডিএনসি গত জানুয়ারিতে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ওই চালান জব্দের পর আইস ও এলএসডির পর দেশে আরেকটি কৃত্রিম মাদক ডিওবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা ডাইমেথক্সিব্রোমো অ্যাম্ফেটামিন নামে পরিচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএসডির মতো ল্যাবরেটরিতে তৈরি হয় এই মাদক। ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, খুলনার ওই দুই তরুণ পোল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডিওবি নিয়ে আসেন। এর আগে দেশে কখনই এই মাদক ধরা পড়েনি। ইন্টারনেটে গ্রাফিক্সের কাজ করতেন আসিফ। এর মাধ্যমেই সে ডিওবির খোঁজ পায়। পরে অনলাইনে অর্ডার দেয় এবং পেপালের মাধ্যমে পেমেন্ট করে।

ডিএনসি সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর আসিফ ও অর্ণব প্রথমে দাবি করেন, ডিওবি কোনো মাদক নয়। ডিওবি সেবনে ‘তৃতীয় নয়ন’ খুলে যায় এমন প্রচার চালিয়ে তারা ক্রেতা সংগ্রহ করছিলেন। ঢাকা ও খুলনায় অনেকের মধ্যে তারা এটা বিক্রি করেছেন। মূলত খুলনা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তারা এই মাদক সরবরাহ করতেন বলে তদন্তকারীরা তথ্য পেয়েছেন। তবে তাদের কাছে তথ্য ছিল এলএসডির (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) মতো এক ধরনের মাদক দেশে নিয়ে আসছে একটি চক্র। সেটা ধরতে ক্রেতা সেজে ফাঁদ পাতেন তারা। তারপর কুরিয়ারে খুলনা থেকে ঢাকার নিউমার্কেটে আসে এলএসডি। ওই কুরিয়ার কোম্পানির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে একটি খামের ভিতরে থাকা এলএসডির পাঁচটি স্ট্রিপ বা ব্লট জব্দ করা হয়। ওই খামে দেওয়া মোবাইলফোন নম্বরের সূত্র ধরে জানা যায়, আসিফ আহমেদ নামের এক তরুণ খুলনা থেকে মাদক পাঠিয়েছেন। এরপর খুলনার বয়রা এলাকার বাসা থেকে ১০ ব্লট এলএসডিসহ আসিফকে আটক করেন ডিএনসির কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ তাদের জানান, তার বন্ধু অর্ণবের বাসায় বিপুল পরিমাণ ডিওবি রয়েছে। এরপর অর্ণবের বাসায় অভিযান চালিয়ে ডিওবি জব্দ করা হয় ৯০ ব্লট, যার ওজন ১২৬ মিলিগ্রাম। এই ঘটনায় ডিএনসির পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া বাদী হয়ে মামলা করেন।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দফতরের (ইউএনওডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত শতকের সত্তরের দশক থেকে ডিওবি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মাদক হিসেবে প্রচলিত আছে। ডিএনসি কর্মকর্তারা জানান, এলএসডির মতোই ব্লট আকারে কাগজের মধ্যে ছিল ডিওবি। খুব সহজেই কুরিয়ারে এটি অন্যত্র পাঠানো যায়। তবে এই মাদকের দাম অনেক বেশি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা ডার্ক ওয়েবে (ইন্টারনেটের একটা অন্ধকার জগৎ) অর্ডার করে ইউরোপ থেকে ২০০ ব্লট ডিওবি এনেছিলেন। তবে তাদের কাছে পাওয়া গেছে ৯০ ব্লট। বাকিগুলো তারা আগেই বিক্রি করে দেন। ক্ষতির দিক থেকে ডিওবি এলএসডির চেয়েও ভয়ংকর। আদালত সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া আসিফ, অর্ণব ও মামুন গত মাসে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

সর্বশেষ খবর