বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ফেনসিডিল আমদানির অনুমতি চাইলেন আওয়ামী লীগ নেতা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটে পুলিশের ওপেন হাউস ডে-তে বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজস্ব আয় বাড়াতে ফেনসিডিল আমদানি করার অনুমতি চেয়েছেন। এ সময় তিনি ফেনসিডিলের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হওয়ার অভিযোগও তোলেন।

সোমবার বিকালে আদিতমারী থানা আয়োজিত ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে এসপি আবিদা সুলতানার উপস্থিতিতে এ বক্তব্য দেন তিনি। আজিজুল ইসলাম প্রধান আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে আজিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘আমি নিজেও এক বোতল ফেনসিডিল খেয়েছি। ঘুম ছাড়া কিছুই হয় না।’ তার এভাবে বক্তব্যের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আজিজুল ইসলাম বলছেন, ‘সত্য বলব তাতে জেল-ফাঁস যা হয় হোক। ভারতে ফেনসিডিল মাত্র ৩৫ টাকা। এই ফেনসিডিলের কারণে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে। আমার তিন ছেলে মাস্টার্স পাস করেছে। তাদের নিষেধ করলেও গোপন জিনিসের ওপর আরও আগ্রহী হয়ে খাচ্ছে। ভারতে গিয়ে আমি নিজেও এক বোতল খেয়েছি, ঘুম ছাড়া কিছু হয় না। ভারতে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি, দেশের তুসকা সিরাপের মতোই ফেনসিডিল, যাতে ঘুম ছাড়া কিছু নেই। অথচ এটার জন্য হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টা বঙ্গবন্ধুকন্যার নজরে আনা যায় কি না। ভারত থেকে ৩৫ টাকায় ফেনসিডিল কিনে ৭০ টাকা ট্যাক্স নিয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করলেও ব্যবসা হবে, রাজস্ব বাড়বে সরকারের। তাই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলে আলোচনা করা দরকার।’ তার এমন বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সবাই অট্টহাসিতে প্রতিবাদ জানান। এ সময় কৌশলে তার বক্তব্য থামিয়ে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম।

এমন বক্তব্যে হতভম্ব হয়ে পড়েন প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। আমদানি-নিষিদ্ধ যুবসমাজ ধ্বংসকারী ফেনসিডিল আমদানিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা আওয়ামী লীগ নেতার এ বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। যে ফেনসিডিল তথা মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বারবার প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেই সরকারের তৃণমূল নেতা ফেনসিডিল আমদানিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশাসনের সামনে ফেনসিডিল খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এ ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘এ ধরনের দাবি উদ্ভট। ফেনসিডিল আমদানি করা হলে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে মনে করি। এতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা যদি এ ধরনের কথা বলে থাকেন তাহলে তা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ ও সরকার সব সময় সব ধরনের মাদকের বিপক্ষে।’

সর্বশেষ খবর