বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
হ্যাঙ্গারে বিমানের সংঘর্ষ

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তিন দিনেও

বিশেষ প্রতিনিধি

নিজস্ব হ্যাঙ্গারে বিমানের দুটি উড়োজাহাজের সংঘর্ষের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। কীভাবে এত নিরাপদ স্থানে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে এটাই ছিল মঙ্গলবারের টক অব দ্য বিমান। এ ঘটনায় বিমানের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো দায়ী ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার মন্ত্রণালয় থেকেও একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বিমান সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা (কেপিআই) এ ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনা বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক উপস্থিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে থাকার বিধান থাকলেও বিমান তা অনুসরণ করছে না। এখন অজুহাত দেখানো হচ্ছে, তদন্তের আগে কারোর বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উড়োজাহাজ দুটির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল ও মেরামতে সময় লাগবে। বিমান প্রথমে বলেছিল বোয়িংয়ের লোকজন এসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ব্যয় নির্ণয়ের পর মেরামত কাজ শুরু হবে। গতকাল বিমান প্রকৌশল শাখা থেকে জানানো হয়েছে যে, উভয় উড়োজাহাজেরই মেরামত কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে রেখে নিজস্ব জনবল দিয়েই তা সারিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। জানা গেছে, বিমান হ্যাঙ্গারে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটার পরও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার সিদ্বান্ত নেয় বিমান। বিষয়টি যাতে মন্ত্রণালয়ে না পৌঁছায় সে জন্য তাৎক্ষণিক বিমানের এমডি দফতরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দফতর সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় কর্তাদের মধ্যে। এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সবাইকে কড়া নির্দেশ দেন যাতে এ ঘটনা ফাঁস না হয়।

 বিশেষ করে প্রকৌশল দফতরসহ অন্যান্য দফতরের কর্তাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে কোনো মিডিয়ার কেউ কিছু জানতে না পারে। গোপনে গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সবাইকে টাইট লিপড থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিমান প্রকৌশলে থাকা একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃতপক্ষে এক উড়োজাহাজের টোম্যান দিয়ে অন্য উড়োজাহাজ সরাতে গিয়েই দুর্ঘটনার সূত্রপাত। বিমানের সম্পূর্ণ নতুন ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০-এর অনভিজ্ঞ টোম্যানকে দিয়ে হ্যাঙ্গার থেকে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ বের করতে গিয়ে ৭৭৮-এর সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে এই ক্ষতি হয়। বিষয়টি হচ্ছে- টোম্যান বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি হ্যাঙ্গার থেকে বের করার জন্য পুশ বোতামে চাপ দেওয়ার পরই এটি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে বোয়িং ৭৩৭ সজোরে ধাক্কা দেয় হ্যাঙ্গারে থাকা বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের লেজে (টেল)। এতে একটি উড়োজাহাজের লেজ ও পাখার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। অপরটির ককপিটের একটি অংশ ছিদ্র হয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টোম্যানের অনভিজ্ঞতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এ সম্পর্কে বিমান প্রকৌশল শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও কারও কোনো ধরনের জবাবদিহি নেই। ফলে যে যেভাবে পারছে অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে বিমানের অপর একটি উড়োজাহাজ বার্ড হিট হয়ে গ্রাউন্ডেড হয়েছে। এটি বিমানের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার। বর্তমানে সব মিলে বিমানের চারটি উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে। এ অবস্থায় বিমানের ফ্লাইট শিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। ২-৩ ঘণ্টা দেরিতে বিমান ছাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে চরম গাফিলতি ও অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার সন্ধ্যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমানের নিজস্ব দুটি এয়ারক্রাফট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ই আর এবং বোয়িং ৭৩৭-এর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের লেজের হরিজেন্টাল স্ট্যাবিলাইজার ভেঙে গেছে। অপর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ককপিটের একটি অংশ ছিদ্র ও নোজের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর