শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপির

আন্দোলন ও অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে নেই কোনো বৈঠক-আলোচনা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপির

অনেকটা বিলুপ্তির পথেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন বহুল আলোচিত ‘২০ দলীয় জোট’ ও ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। জোট দুটির ব্যানারে সর্বশেষ কবে বৈঠক হয়েছিল জানা নেই খোদ দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের। জোটপ্রধান বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে থাকলেও এ নিয়ে আন্দোলন ও অভিন্ন কর্মসূচি প্রশ্নে শরিকদের সঙ্গে নেই আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও আলোচনা। ফলে শরিকদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বেড়েই চলেছে। এ প্রসঙ্গে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটকে কীভাবে আরও সক্রিয় করা যায়- সে ব্যাপারে জোট শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, বাকিদের সঙ্গেও শিগগিরই হবে। এরপর আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে।

জানা যায়, বছরের পর বছর জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিও নেই। জোটের শরিক দলের বেশির ভাগ নেতার অভিযোগ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই ২০ দলীয় জোটকে ঠিকমতো মূল্যায়ন করছে না বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে জোটের রাজনীতি অকার্যকর থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দল জোট ত্যাগ করেছে। ফলে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আগামীতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় ও চাঙা করার দাবি শরিক দলের নেতাদের।  জানা যায়, বর্তমানে ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনো জোটকেই প্রাধান্য দিচ্ছে না বিএনপি হাইকমান্ড। ২০ দলীয় জোটে জামায়াতকে ধরে রাখতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকও   ডাকা হচ্ছে না। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে জোটগত রাজনীতির প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি অনুধাবন করে এতে নতুনত্ব আনার পক্ষে বিএনপি। তাই বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করছে দলটি। ডান-বাম-ইসলামীসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা করছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে অক্ষুণ্ন রেখে সেই বৃহত্তর জোট গঠন করতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গঠনের উদ্যোগকেও ইতিবাচকভাবে দেখছে ২০ দলের অধিকাংশ শরিক।

২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার আহ্বান জানিয়ে জোট শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ২০ দলীয় জোট পরীক্ষিত জোট এবং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ২০ দলীয় জোটের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়া দরকার। দীর্ঘদিন বৈঠক না হওয়া দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে শরিক দলগুলোর কর্মসূচিতে বিএনপি আসছে। বিএনপির কর্মসূচিতেও তারা আমাদের ডাকছে। এতে দূরত্ব কমে আসছে।

এলডিপি একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ২০ দলীয় জোটের সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ভালো। শরিকদের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব কমছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আমরা সক্রিয় শরিকরা তাদের পরীক্ষিত বন্ধু। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারেক রহমান জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছেন তাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই একটি বৃহৎ প্ল্যাটফরম তৈরি হবে।

আরেক জোট শরিক এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটকে যথেষ্ট সম্মান-মর্যাদা দেয়। বিপরীত দিকে ২০ দলীয় জোটে ভিন্ন চিত্র। বিএনপি জোটে নিবন্ধিত দলগুলোকে গুরুত্ব দিলেও অনিবন্ধিত দলগুলোকে মূল্যায়ন করে না। অথচ নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সবাইকে নিয়েই ২০ দলীয় জোট। ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় পার্টি (জাফর) যুগ্ম মহাসচিব এ এস এম শামীম বলেন, জোটের বৈঠক হওয়া দরকার। শুধু কেন্দ্রের না, জেলা-উপজেলা ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর বৈঠকের মাধ্যমে সমন্বয় হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে জোট লাভবান হবে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, এ উপমহাদেশে রাজনীতির স্বার্থে রাজনৈতিক জোট অনস্বীকার্য। সময়ের প্রয়োজনে নতুন জোট গঠন ও পুরনো জোট বিলুপ্ত হতেই পারে। বহুদিন ধরে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয়। এ পরিস্থিতিতে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে আন্দোলনে গ্রহণযোগ্য দেশপ্রেমিক সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক কাতারে আনা সময়ের দাবি। নতুন জোট গঠনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হবে পুরনো জোট দুটি। জামায়াতকেন্দ্রিক বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতেই এ কৌশল গ্রহণ করছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা আশা করেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ইতিবাচক ভাবমূর্তির সব দল-মতকে সম্পৃক্ত করার পথে জামায়াত নিজ থেকে সুযোগ করে দেবে।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জোট ছেড়ে গেলে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চারদলীয় জোটে সংযুক্ত হয়। চারদলীয় জোট ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ের পর সরকার গঠন করে। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চারদলীয় জোটের সঙ্গে নতুন ১৪টি দলের সংযুক্তির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট গঠিত হয়। পরবর্তীতে আরও দুটি রাজনৈতিক দল যুক্ত হলে জোটের পরিধি বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দলে। এরপর জোটে আরও ৩টি দল যোগ দেয়। তবে ভাঙাগড়ার প্রক্রিয়ায় এই জোটে এখন ২০টি দলই রয়েছে।

সর্বশেষ খবর