শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ইমাম পরিচয়ে ২১ বছর পালিয়ে ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা

কিশোরগঞ্জে র‌্যাবের হাতে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইমাম পরিচয়ে ২১ বছর পালিয়ে ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা

শফিকুল ইসলাম

টানা ২১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন রমনা বটমূলে বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) নেতা মুফতি শফিকুল ইসলাম। তিনি নাম পাল্টে ১৪ বছর ধরে ইমামের চাকরিতে ছিলেন।

র‌্যাব জানিয়েছে, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ভয়ঙ্কর এই আসামি নাম পরিবর্তন করে হয়ে ওঠেন মুফতি আবদুুল করিম। শুরু করেন ইমামতি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করার পর থিতু হন নরসিংদীর একটি চরের মসজিদে। বেতন পেতেন মাসে ৫ হাজার টাকা। সবশেষে র‌্যাব গত বৃহস্পতিবার রমনা বটমূলে বোমা হামলা ও একাধিক মামলার পলাতক এই আসামিকে কিশোগঞ্জের ভৈরব  থেকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত হুজিবির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন শফিক। ইমামতির আড়ালে তিনি মানুষের মাঝে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা চালাতেন। কেবল নিজের একমাত্র ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মুফতি শফিকের। সম্প্রতি বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ছেলেকে অনুসরণ করেই শফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়। তবে ছেলের সঙ্গে সব সময়ই নরসিংদীর বাইরে গিয়ে দেখা করতেন তিনি। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন দুর্বৃত্তদের  বোমা হামলায় দশজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। ওই হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। তাছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তিন শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টার সহযোগিতাসহ দুটি পৃথক মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মুফতি শফিকুর রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। গ্রেফতার শফিকুর ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা অপর মামলারও পলাতক আসামি তিনি। র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হন। ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতার শফিকুর রহমান চার্জশিটভুক্ত আসামি। গ্রেফতার মুফতি শফিকুরের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মোট ছয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। গ্রেফতার শফিকুর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নিজ গ্রামে ৫ম শ্রেণি পাস করার পর মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকার চকবাজারে একটি মাদরাসা থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত  হেদায়ায় পড়াশোনা করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে বাংলাদেশে ফেরত আসেন।

মুফতি শফিকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী পশ্চিম পাড়ায়। তার বাবার নাম মরহুম মৌলভী শিশু মিয়া। তার বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় পাঁচটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মুফতি শফিক হুজিবির আমির ছিলেন। ১৯৯২ সালে হুজিবি প্রতিষ্ঠাকালীন প্রভাবশালী সদস্য হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ নামে ইসলামপন্থি একটি মৌলবাদী সংগঠনের জন্ম দিয়ে তিনি দেশে আলোচনায় আসেন।

সর্বশেষ খবর