রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

যুদ্ধে নতুন মোড়

বাড়ছে পরমাণু হামলার আশঙ্কা, বিস্ফোরণে কাঁপছে ইউক্রেন, পশ্চিমাদের ভয়ংকর পরিণতির হুমকি রাশিয়ার

প্রতিদিন ডেস্ক

যুদ্ধে নতুন মোড়

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। হঠাৎ করেই রাশিয়া আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। দুই দিন আগে রাশিয়ার একটি যুদ্ধ জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার পর ইউক্রেনের নানা স্থানে ধারাবাহিকভাবে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র আগের চেয়ে বেশ শক্তিশালী। হামলার মুখে ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলো শুক্রবার থেকে বারবার কেঁপে উঠছে। এইসঙ্গে রাশিয়া পশ্চিমা সামরিক জোটকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের অপ্রত্যাশিত পরিণতি ভোগ করার সময় এসে গেছে। এরকম হুঁশিয়ারির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর বাতিল করেছেন। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া এবার পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, স্পুটনিক। রুশ সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে গতকাল গণমাধ্যমগুলোকে জানানো হয়েছে, তারা ডোনেটস্ক এবং লুগানস্কে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে। শুক্রবার রুশ বাহিনী ৮৮১টি ইউক্রেনীয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনে অবস্থানরত পশ্চিমা সাংবাদিকরা গতকাল সকালে জানান, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে ঘন ঘন জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। প্রথম প্রহরগুলোতে এ শব্দ শোনা যায়। একইভাবে ইউক্রেনের বেশির ভাগ শহরেই বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল এবং শহরগুলোতে বিমান হামলার সাইরেন অনবরত বেজে চলছিল। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো এক টেলিগ্রাম পোস্টে জানান শহরের উপকণ্ঠ দারনিটস্কি জেলায় ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। গভর্নর মাকসিম কোজিটস্কি জানান, গতকাল ভোরে ঘন ঘন বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। লভিভের আকাশে রুশ যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা গেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেঙ্কোভ গতকাল বলেছেন, রুশ বিমান বাহিনী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে রাতারাতি ইউক্রেনের ১৬টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হামলার শিকার ১৬টি সামরিক স্থাপনার মধ্যে ওডেশা অঞ্চলের পোভস্তানস্কো গ্রামে ইউক্রেনের সামরিক যানের ১১টি সংরক্ষণাগারও রয়েছে। কোনাশেঙ্কোভ জানান, রুশ সেনারা ইউক্রেনের নিকোলেইভ শহরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলার দুটি গুদাম ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া পোলতাভা শহরের দক্ষিণ-পূর্বে রাডার ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের সরঞ্জামের গুদাম,  পোলতাভা শহরের দক্ষিণে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম এবং গুসারভকা গ্রামে বিমান বাহিনীর ৯৫তম ব্রিগেডের ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলোর একটি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি ট্যাংক তৈরির কারখানা এবং নিকোলেইভের সামরিক সরঞ্জাম মেরামতের জন্য একটি ওয়ার্কশপও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে বলে তিনি জানান। পশ্চিমাদের ‘অপ্রত্যাশিত পরিণতির’ হুমকি রাশিয়ার : ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর এক আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক নোটে এই হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই নোটের কপি হাতে পেয়েছে কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম। দুই পাতার এই কূটনৈতিক নোটটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে পৌঁছে দিয়েছে ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাস। এতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সরবরাহ করা অস্ত্র ইউক্রেন সংঘাতে ‘জ্বালানি যোগাচ্ছে’। আর এর জেরে পশ্চিমাদের ‘অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ ভোগ করতে হতে পারে। এরই মধ্যে সে রকম সময় ঘনিয়েও এসেছে। নোটে আরও বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনে সমরাস্ত্র প্রেরণ ও মোতায়েন করা হলে যুদ্ধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, যা থেকে পশ্চিমা দেশ রেহাই পাবে না।’ খবরে বলা হয়, গত মঙ্গলবার ওই কূটনৈতিক নোটটি পাঠানো হয়। সেদিন কেবলই ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সামরিক প্যাকেজ সহায়তার খবর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৮০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেন। এগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো রয়েছে দীর্ঘ পাল্লার গোলা বর্ষণ অস্ত্র। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছাবে মার্কিন সহায়তা প্যাকেজের নতুন অস্ত্রের প্রথম চালান। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে তিন শ কোটি ডলারের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান, বিমান বিধ্বংসী স্টিংগার, ট্যাংক বিধ্বংসী জ্যাভলিন, কামিকাজ ড্রোন, গ্রেনেড লঞ্চার ও গোলাবারুদ। যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ করে বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ও ট্যাংকধ্বংসী জ্যাভলিনের কার্যকারিতা ঈর্ষণীয়, যা রুশ বাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি সম্পর্কে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘রাশিয়া প্রকাশ্যে যেসব হুমকি দিয়েছে ওই নোটের সুরেও তার ছাপ আছে। এতে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অস্ত্রের চালান ঢোকার পর সেগুলোকে লক্ষ্যস্থল করা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।’

জেলেনস্কির পরমাণু হামলার আশঙ্কা : কিয়েভে নিজের কার্যালয় থেকে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালাতে পারে। এ জন্য পৃথিবীর সব দেশকে প্রস্তুত থাকা উচিত। এ আশঙ্কার প্রতিক্রিয়া সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেন, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে রাশিয়া কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

জো বাইডেন ইউক্রেন সফর করবেন না : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন সফর করবেন না বলে গত শুক্রবার জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি। এর এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি ইউক্রেন সফর করতে প্রস্তুত। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, তিনি কিয়েভ সফর করতে চান। এ নিয়ে জেন সাকি বলেছেন, ‘তিনি যে কোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত, কিন্তু আমরাই প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেন সফরে পাঠাচ্ছি না।’

১৮ ইউরোপীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করল রাশিয়া : ব্রাসেলসের ‘অবন্ধুসুলভ আচরণের’ জবাব দিতে ১৮ জন ইউরোপীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব ইউরোপীয় কূটনীতিককে শিগগিরই মস্কো ত্যাগ করতে হবে। খবরে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ১০ দিন আগে ১৯ জন রুশ কূটনীতিককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ব্রাসেলস থেকে বহিষ্কার করে। ব্রাসেলস অভিযোগ করে, এসব কূটনীতিক তাদের পেশা বাদ দিয়ে ভিন্ন তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। এসব রুশ কূটনীতিককে ব্রাসেলস ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর