রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

তাকওয়ার পথে কতটা এগোলাম!

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

তাকওয়ার পথে কতটা এগোলাম!

দেখতে দেখতে মাহে রমজানের অর্ধেকটা চলে গেল। আর অর্ধ রমজান আমাদের হাতে আছে। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইহতিসাবের সঙ্গে মাহে রমজানের সিয়াম পালন করবে, আল্লাহতায়ালা তার পিছনের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি) হাদিসের ‘ইহতিসাব’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। ইহতিসাব শব্দের অনেকগুলো অর্থের মধ্যে একটি অর্থ হলো, প্রতিদানের আশা করা। আরেকটি অর্থ হলো- তৃপ্তি বা পরিতৃপ্তি। এ হিসেবে হাদিসখানার অর্থ দাঁড়ায়, যে ব্যক্তি প্রতিদানের আশায় তৃপ্তির সঙ্গে রমজানের রোজা পালন করবে, তার পেছনের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অন্য একদল মুহাদ্দিসের মতে, হাদিসে বর্ণিত ‘ইহতিসাব’ শব্দের অর্থ আত্মোপলব্ধি-আত্মসমালোচনা। আমাদের শুধু রোজা রাখলেই চলবে না। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে নিজেকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। রোজার শুরুতে আমি কেমন ছিলাম? এখন কতটুকু ডেভেলপ করেছি? আগে তো আমার ভিতর এই দোষ ছিল। রোজা এসে কি আমাকে একটু হলেও বদলাতে পেরেছে? আগে আমি ঘুষ নিতাম, দুর্নীতি করতাম, মিথ্যা বলতাম, এখন কি তা কমে এসেছে? যদি আস্তে আস্তে কমে আসে, যেমন আগে যদি আপনি দিনে একশটা মিথ্যা বলতেন এখন বলেন নব্বইটা, এভাবে নিজেকে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন ভালো মানুষ হওয়ার প্রাণপণ সাধনা করতে পারেন- তাহলে আল্লাহপাক আপনাকে সুখবর দিচ্ছেন, বান্দা! তোমার পিছনের জীবনের সব ভুল আমি ক্ষমা করে দিলাম। রোজা রেখে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, মানুষ, মানুষের জীবন, জীবনের কষ্টকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকাটা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। তো আমি আপনি তো ১০-১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকি, যে হতভাগা বনি আদমরা জীবনজুড়েই না খেয়ে থাকে, তাদের কষ্টটা কেমন? আমরা তো রোজা রেখে ইফতারে গলা ডুবিয়ে খেয়ে নিই, কিন্তু ওই গরিব মানুষগুলো, যাদের জীবনে কোনো ইফতারের জমকালো ভোজ নেই, নেই সাহরিতে রাজকীয় আয়োজন, তাদের অবস্থা কেমন? প্রিন্সিপ্যাল ইবরাহিম খাঁ এক আলোচনায় বলেন, মানুষের ক্ষুধার কষ্ট কী তা বোঝার জন্যও নবীজি অনেক সময় না খেয়ে থাকতেন। বেশির ভাগ সময় তিনি নিজের খাবার অন্যকে দিয়ে অনাহারে কাটাতেন। হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, গরিব সাহাবিরা ক্ষুধার কষ্ট সইতে না পেরে পেটে পাথর বাঁধত, নবীজি তাদের কষ্ট অনুভব করার জন্য না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কাটিয়ে দিতেন। হে আমার রোজাদার ভাই! আমি আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকি। দুপুরের পর থেকে ক্ষুধার মাত্রা বাড়তে থাকে। একসময় মনে হয় আর যেন পারছি না। মাঝে মাঝে এমনো হয়, কাজকর্ম সব বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। তো ভাই আমাদের এই কষ্ট তখনই সার্থক হবে যখন উপলব্ধি হবে, আমাদের আশপাশে যারা না খেয়ে আছে তাদেরও ঠিক এমনই কিংবা এরচেয়েও বেশি কষ্ট হয়। এই ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে দুমুঠো খাবার নিশ্চিত করা একজন রোজাদারের কর্তব্য। আর এ জন্যই আল্লাহ সামর্থ্যবানদের ওপর জাকাত-সদকাতুল ফিতরসহ দান-খয়রাত ফরজ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বারবার বলেছেন, এতিম-অসহায়দের অধিকার দিয়ে দাও। আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের পাশে দাঁড়াও। আল্লাহ আমাদের ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার তাওফিক দিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর