রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ঘুরেফিরে এক সৌদি আরবই ভরসা

প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ নতুন শ্রমবাজার, আটকেই আছে মালয়েশিয়ার দরজা

জুলকার নাইন

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ঘুরেফিরে এক সৌদি আরবই ভরসা হয়ে রয়েছে। বিদেশে মোট যেসংখ্যক কর্মী পাঠানো হয় এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই যায় চার ভাগের তিন ভাগ। গত বছরে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৭৪ শতাংশ হয়েছে সৌদি আরবে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৬৪ শতাংশই গেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে। বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য নতুন নতুন শ্রমবাজারের কথা বলা হলেও তা আসলে প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। সিদ্ধান্তহীনতায় এখনো আটকে রয়েছে বন্ধ হয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার মালয়েশিয়ার দরজাও। বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্বের ছোট বড় মিলিয়ে ১৬৮ দেশে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজারের কথা বলা হয়। কিন্তু এর মধ্যে বেশির ভাগ দেশেই চাহিদা না থাকা ও অন্যান্য কারণে নিয়মিত কর্মী পাঠানো সম্ভব হয় না। মূলত হাতে গোনা ছয়টি দেশেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। এর মধ্যে আক্ষরিক অর্থে সৌদি আরবই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার হয়ে রয়েছে। এর বাইরে মাঝারি মানের চাহিদা রয়েছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও জর্ডানে। অল্প কিছু করে যাচ্ছেন মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও লেবাননে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে আসার পর গত বছর ২০২১ সালে বিদেশে মোট কর্মসংস্থান হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জনের। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ৯ জন গেছে ওমানে। ২৯ হাজার ২০২ জন গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ও সিঙ্গাপুরে গেছে ২৭ হাজার ৮৭৫ জন। এ ছাড়া গেছে কুয়েতে ১ হাজার ৮৪৮, কাতারে ১১ হাজার ১৫৮, বাহরাইনে ১১, লেবানানে ২৩৫, জর্ডানে ১৩ হাজার ৮১৬, লিবিয়ায় ৩, সুদানে ৩৯, মালয়েশিয়ায় ২৮, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০৮, যুক্তরাজ্যে ১২৩, ইতালিতে ৬৫৩, জাপানে ৩, ব্রুনাইতে ১২, মরিশাসে ২১৫ এবং ইরাকে ৫ জন।

চলতি ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৮৩ জনের। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৭ জন। বাইরে এই তিন মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গেছে ওমানে ৪১ হাজার ৬১৭ জন এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৯ হাজার ৮২৭ জন। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে গেছে সিঙ্গাপুরে ১৩ হাজার ৩৬৪, জর্ডানে ৫ হাজার ১৭, কাতারে ৪ হাজার ৪৯৬, কুয়েতে ১ হাজার ৯৬৬, মরিশাসে ৭০৭, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭০১, ইতালিতে ৩২৫, লেবাননে ১০৫, বাহরাইনে ১, লিবিয়ায় ২, সুদানে ২৪, মালয়েশিয়ায় ৩৪, যুক্তরাজ্যে ৬৬, জাপানে ৯, ব্রুনাইতে ১১, ইরাকে ৩ এবং অন্যান্য দেশে ২ হাজার ৮০৯ জন। কর্মকর্তারা জানান, মাঝে মহামারির সময়টা বাদ দিলে ধারাবাহিকভাবে প্রতি মাসেই প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক কর্মী গেছে সৌদি আরবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গেছে ৭১ হাজার ১৭২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫৬ হাজার ১৫ জন এবং মার্চে ৭৮ হাজার ৮৭০ জন। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ৮৭ হাজার ২১২, নভেম্বরে ৭১ হাজার ৭২৫, অক্টোবরে ৫১ হাজার ৪৭২, সেপ্টেম্বরে ৩১ হাজার ২৩৮, আগস্টে ১৪ হাজার ৯১৯, জুলাইয়ে ১১ হাজার ২৮২, জুনে ৪৪ হাজার ৯৮৫, এপ্রিলে ২৩ হাজার ৮৭৯, মার্চে ৪৪ হাজার ৯৫৭, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮ হাজার ৩৯৬ ও জানুয়ারিতে ২৬ হাজার ৬৫০ জন গেছে সৌদি আরবে। প্রবাসীদের কর্মসংস্থান নিয়ে যুক্তরাজ্যে গবেষণা করা ড. তমিজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের মতো বৃহৎ অভিবাসী কর্মী প্রেরণ করা দেশের জন্য একটি মাত্র শ্রমবাজারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। বৈশ্বিক কূটনৈতিক বাস্তবতায় এখন একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্কের ওঠানামা সময়ের ব্যাপারমাত্র। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রায় ধসে পড়বে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর বিভিন্ন দেশে কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সুযোগটি আমরা নিতে পারছি না। কাক্সিক্ষত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ঘাটতিও বড় কারণ। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল এদিক থেকে অনেক এগিয়েছে। ড. তমিজউদ্দিনের মতে, সব আলোচনা শেষেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো শুরু করতে বিলম্ব করা হতাশাজনক।

সর্বশেষ খবর