সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টের প্রতিটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, একটি দায়িত্বশীল ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে চাওয়া রাষ্ট্র হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটার প্রতিটি বিষয় নিয়ে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলব। আমরা ব্যাখ্যা চাইব। যেগুলো বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সরাসরি পরিপন্থী সেগুলো প্রত্যাহার করতে বলা হবে। কারণ এতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অন্যান্য ক্ষেত্রে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রতিবেদনে যেসব সোর্স থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, এ সোর্সগুলো দুর্বল। প্রতিবেদনে কিছু বিষয় আছে যা বাংলাদেশের বাস্তবতা থেকে যোজন যোজন পথ দূরে। আর বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ব্র্যান্ড নেম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া র‌্যাবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেওয়ার কোনো অপচেষ্টা ভালোভাবে নেওয়া হবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও নাক গলানোকেও পছন্দ করবে না সরকার। মানবাধিকার রিপোর্টের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয় প্রতিবেদনে কিছু বিষয় আছে যা বাংলাদেশের বাস্তবতা থেকে যোজন যোজন পথ দূরে। যা কখনোই বাংলাদেশের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ রিপোর্টে কিছু উপাদান আছে যেটা আমরা-আপনারা ছোটবেলা থেকে যা শিখেছি, আমাদের ধর্ম যা শিখিয়েছে, আমাদের রাষ্ট্রের মানুষের যা প্রত্যাশা এর সরাসরি পরিপন্থী।  তিনি বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ৬০৬টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাে র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে আসলে ২৭৫টি অমীমাংসিত হত্যাকাে র কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ রিপোর্টের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনে কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে বিশ্বের উন্নত উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ওপরে। যেমন রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তার কথা সবাই স্বীকার করে। তারপরও এ বিষয় নিয়ে ছবক দেওয়া হয়েছে। শ্রমমান নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আটটি সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং তা মেনে চলে। কিন্তু যারা এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেই যুক্তরাষ্ট্র মাত্র দুটি সনদে স্বাক্ষর করেছে। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, তারা কীভাবে আমাদের শ্রমমান বিষয়ে উপদেশ দিতে পারে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। এ বিষয়গুলো নিয়ে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাক গলানো বাংলাদেশ পছন্দ করবে না। পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আমাদেরও কিছুটা খেদ আছে। কিন্তু সেটার জন্য রেসপন্সিবিলিটি আদৌ আমাদের কি না; এক হাতে তো তালি বাজে না! একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে গেলে যে আরও দল লাগে। ওগুলো তাদের ব্যর্থতা। তিনি বলেন, স্বপ্রণোদিত হয়ে শেখ হাসিনার সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করেছে। মাত্র ৯১ বা ৯৬ থেকে বাংলাদেশে সত্যিকার সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু। এ যাত্রার স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ যতদূর এসেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছে এটার কোনো প্রশংসা এ রিপোর্টে নেই। অতীতে গণমাধ্যমকর্মীরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশ শ্রমমান উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ৯৮ ভাগ উন্নন হয়েছে আরও ২ ভাগ বাকি। এ রিপোর্টে তার কোনো উল্লেখ নেই, আমরা যে এত পথ পাড়ি দিয়ে এতদূর এসেছি। তার কোনো প্রশংসা নেই। তিনি বলেন, রিপোর্টে যেসব সোর্স থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, এ সোর্সগুলো দুর্বল। যারা এগুলো চালান, নিকট অতীতে তাদের রাজনৈতিক অভিপ্রায় প্রকাশ্যই ছিল।  বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব আছে যেসব রাষ্ট্রের তারা বাংলাদেশের নিকট অতীতের ইতিহাসটা ভালোভাবে জানবেন বলেই আমরা আশা করি। এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের জন্যই প্রযোজ্য। আমাদের নিকট অতীত ভুলে গেলে চলবে না। আমরা মিডিয়ায় দেখেছি, খুবই সেনসিটিভ ইস্যুতে খুবই দায়িত্ববান মানুষ ফেসবুকে এসে লাইভ করছেন, দাবি করছেন, রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। টর্চার করা হয়েছে। এ কারণে যখন তাকে ধরা হলো, তখন তার পক্ষে আবার নেমে গেল। এ বিষয়গুলো নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে না কারও কাছ থেকে।

র‌্যাব প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন দেশের সুপারিশে র‌্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণে র‌্যাব সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছে। আমরা খুবই অল্প সময়ে; যদিও শেষ নয় এ যুদ্ধ, আমরা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিতে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং মোটামুটি বলা যায় মূল উৎপাটন করতে পেরেছি। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো এ ধরনের সমস্যায় যে কোনো সময় পড়তে পারে। কারণ যে অঞ্চলে আমরা বসবাস করি, এ অঞ্চলের ইতিহাস ভালো না। এ অঞ্চলে বর্তমানও অনেক দেশে ভালো নয় এবং নিকট ভবিষ্যৎও ভালো মনে হচ্ছে না। সে জায়গায় সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র, যেখানে মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে, যেখানে সবার মতামত দেওয়ার মতো পরিবেশ অব্যাহত থাকবে, সেখানে  জাতির গর্বের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে। র‌্যাব শক্তিশালী করার পরিকল্পনা আগে ছিল, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, পয়সাও দিয়েছেন, এখন কোনো কারণে দিচ্ছেন না। কিন্তু এগুলোকে ধ্বংসের চেষ্টা করবেন না। গ্রামে-গঞ্জে গেলে দেখবেন রাব একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে গেলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়, যারা জঙ্গিবাদ দমন করে। জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে তারা কাজগুলো করছে। তারপরও সেখানে যে ব্যত্যয়গুলো হয়েছে সে ব্যত্যয়গুলো নিয়েও আমরা প্রকাশ্যেই কাজ করছি। আমরা এগুলো সুরাহারও পথ খুঁজছি। আমাদের এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেওয়ার কোনো অপচেষ্টা আমরা ভালোভাবে নিতে পারব না, বলেন শাহরিয়ার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঝুঁঁকির প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত যে কোনো সপ্তাহের যদি হিসাব নেন, দেখবেন বন্দুকযুদ্ধ, মাদক পাচার বেড়েছে। প্রতিনিয়ত তারা নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বে নিহত হচ্ছেন। মুহিব উল্লাহর মতো একজন মিয়ানমারের নাগরিক তার জনগোষ্ঠীকে ফিরে যাওয়ার জন্য বোঝাচ্ছিলেন। তাকে হত্যা করা হলো। সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কতটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ রকম একাধিক রোহিঙ্গা নেতা আছেন যাদের আমাদের পুলিশ-র‌্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। বডি গার্ড হিসেবে কাজ করে থাকেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আসলে একটি জটিল বিশ্ব পরিস্থিতিতে জটিল পরিবেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে অনেক সময়ই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে বাইরে ফ্যাক্টরগুলো প্রভাবিত করে। এগুলো থেকে নিরাপদে রেখে বাংলাদেশকে আমরা উচ্চ আয়ের রাষ্ট্রে নিয়ে যেতে চাই ২০৪১ সালে। আমরা আশা করি, সব রাষ্ট্র বন্ধু হিসেবে সহযোগিতা করবে। তাদের কোনো সিদ্ধান্ত বা কর্মকান্ড বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

সর্বশেষ খবর