সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মাহে রমজান ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মাহে রমজান ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৬তম রোজা আমরা পালন করছি। রব্বুল আলামিন যাকে তাওফিক দেন তিনিই নেক কাজ করতে পারেন। রোজা পালন অনেক বড় ফরজ এক ইবাদত। তার জন্য প্রয়োজন রব্বুল আলামিনের কাছে বেশি বেশি দোয়া করা ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে পূর্ণ উদ্যমে সঠিক পন্থায় ইবাদত করা। তাই আসুন জেনে নেই তাওয়াক্কুল কাকে বলে? তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ, ভরসা করা, নির্ভর করা। ‘তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ’ এর অর্থ : রব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা করা। রব্বুল আলামিনের ওপর তাওয়াক্কুল করা গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদত। আল্লাহতায়ালা ব্যতীত অন্য কারও ওপর কোনোভাবেই তাওয়াক্কুল করা যায় না। তাওয়াক্কুল হবে একমাত্র আল্লাহর ওপর। যেমন একজন প্রকৃত মুসলমান বলে থাকেন ‘তাওয়াক্কালনা আলাল্লাহ’ আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করি।

একজন প্রকৃত ইমানদার ব্যক্তি ভালো ও কল্যাণকর বিষয় হাসিলের জন্য নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করবে, সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, তাঁর প্রতি আস্থা ও দৃঢ় ইয়াকিন রাখবে। বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন ফলাফল তা-ই হবে। আর তাতেই রয়েছে পরিপূর্ণ কল্যাণ ও সফলতা। এটাই তাওয়াক্কুলের মূলকথা। মজবুত ইয়াকিন রাখতে হবে যে, রব্বুল আলামিনের সব ফয়সালা বান্দার কল্যাণের জন্যই হয়ে থাকে। এ বিষয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে ইয়াকিন রাখতে হবে যে, তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না। বিপদাপদে ও সংকটে ঘাবড়ে যায় না। যে কোনো দুর্বিপাক, দুর্যোগ, সংকট, বিপদ, বালা-মুসিবতে আল্লাহতায়ালার ওপর দৃঢ় আস্থা রাখে। ঘোর অন্ধকারে আশা করে উজ্জ্বল সুবহে সাদিকের।

আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল তাওহিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এ সম্পর্কে মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,

‘আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার ওপর যিনি মরবেন না।’ [সূরা আল ফুরকান, আয়াত : ৫৮] অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’ [সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ১১]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

‘অতঃপর তুমি যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা কর।’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯]

অন্য আয়াতে এসেছে-

‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট।’ [সুরা আত-তালাক, আয়াত : ৩]

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-

‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ইমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।’ [সুরা আল আনফাল, আয়াত : ২]

এ ছাড়াও আরও অনেক আয়াতে তাওয়াক্কুল সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে। এসব আয়াতসমূহ হতে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারলাম যে,

এক. কোনো ব্যক্তি যখন সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল করবে, তাঁর জন্য রয়েছে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত, প্রতিদান ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।

দুই. তাওয়াক্কুল তো এমন সত্তার ওপর করা উচিত, যিনি চিরঞ্জীব। তিনি হলেন আল্লাহ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ওপর তাওয়াক্কুল করা জায়েজ নয়। তাওয়াক্কুল-ভরসা একমাত্র আল্লাহর ওপরই করতে হবে।

তিন. আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখা মুমিনদের একটি বৈশিষ্ট্য।

চার. আল্লাহ তাঁর রসুলদেরও সর্বাবস্থায় তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পাঁচ . আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। সুতরাং আল্লাহর ভালোবাসা লাভের একটি কার্যকর উপায় হলো তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর ওপর ভরসা করা।

ছয়. আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারীর সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। এ সম্পর্কিত অনেক হাদিস এসেছে, দু-একটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো।

হজরত ইবনে আব্বাস রাজি থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার ওপরই ইমান এনেছি। আপনার ওপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করেছি। আপনার দিকেই মনোনিবেশ করেছি। আপনার জন্যই তর্ক করেছি। হে আল্লাহ! আপনার সম্মানের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি -আর আপনি ছাড়া তো কোনো উপাস্য নেই- যেন আমাকে পথভ্রষ্ট না করেন। আপনি চিরঞ্জীব সত্তা, যিনি মারা যাবেন না। আর মানুষ ও জিন্ন মারা যাবে।’

হজরত ইবনে আব্বাস রাজি থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন,

‘ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হলো, তখন তিনি বললেন, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকিল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক)। আর লোকেরা যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের বলল, (শত্রু বাহিনীর) লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হচ্ছে, তাই তোমরা তাদের ভয় কর, তখন তাঁদের ইমান বেড়ে গেল এবং তাঁরা বলল, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকিল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট তিনি উত্তম অভিভাবক)।’ হজরত ইবনে আব্বাস রাজি থেকে বুখারির আরেকটি বর্ণনায় আছে, ‘আগুনে নিক্ষেপকালে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শেষ কথা ছিল, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকিল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট তিনি উত্তম অভিভাবক)।’ মহান রব্বুল আলামিন আমাদের উক্ত আলোচনাগুলো বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর