মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

২০৩০ সালে ২ কোটি ৮০ লাখ ছাড়াবে

ড. মঈনুল ইসলাম

২০৩০ সালে ২ কোটি ৮০ লাখ ছাড়াবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এই নগর-জনসংখ্যার ৬০ ভাগ আবার বাস করছে চারটি বড় শহরে, যার মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৩২ ভাগের বসবাস। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে শহরের জনসংখ্যা। এভাবে চললে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বছরে ঢাকার জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখ ৭৬ হাজারের কাছাকাছি দাঁড়াবে। তখন এটা হবে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ জনসংখ্যার শহর। মানসম্পন্ন নাগরিক সুবিধা দিতে না পারায় ঝুঁকিতে পড়বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ স্থানান্তর বা মাইগ্রেশন। প্রতিনিয়ত নতুন মানুষের আগমন ঘটছে। কাজের সন্ধানে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তরা এখানে আসছে। এটা বাড়তেই থাকবে। বস্তিতেও মানুষ বাড়ছে। মাইগ্রেশন ঠেকাতে শিল্প কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থাপনে উৎসাহিত করতে হবে। গার্মেন্ট ও যেসব প্রতিষ্ঠান শহরে থাকার দরকার নেই সেগুলোর তালিকা করে শহরের বাইরে নিতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১১ নম্বর গোলে বলা আছে, আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল ও টেকসই জনবসতিপূর্ণ নগর গড়ে তুলব। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা শহরটাকে দুইজন মেয়রের নেতৃত্বে দুই ভাগ করেছি। কিন্তু সেবার মান কি বেড়েছে? মেয়ররা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষ। এমনিতেই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। পাশাপাশি জনঘনত্ব বেড়ে গেলে নাগরিক সেবা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে। নাগরিক সুবিধা উন্নত না হলে টেকসই উন্নয়ন হবে না। তবে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হলেই যে উন্নয়ন হবে না, তা নয়। সিঙ্গাপুর, হংকংয়ে ঘনবসতি হলেও নাগরিক সেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কারণ সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাত অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা বিশে^র অনেক দেশে যাই। কিন্তু সেখানকার ভালো বিষয়গুলো গ্রহণ করি না। ড. মঈনুল বলেন, ঢাকায় আসা বেশির ভাগ মানুষই অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে জড়িত। সুনির্দিষ্ট চাকরি নিয়ে আসছেন এমনটা নয়। অর্থাৎ কর্মসংস্থান ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ঢাকার বাইরে নিশ্চিত করলে মানুষ ঢাকায় আসবে না। মুখে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বললাম, বাস্তবে করলাম না, তাতে লাভ নেই। ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ সেকেন্ডারি সিটির কথা চিন্তা করে রাজধানীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকার তো সক্ষমতার একটা সীমা আছে। বুড়িগঙ্গার পানি মারাত্মক দূষণের কবলে। ভূমিকম্পের মতো একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এই মুহূর্তে নতুন একটা সিটির কথা ভাবা উচিত। আমরা একটা মানসম্মত জীবন চাই। মাথাপিছু আয় বাড়া, জিডিপির ভালো প্রবৃদ্ধি মানেই সত্যিকার উন্নয়ন নয়। এক সময় বেইজিংয়ে যানজট, ঘনবসতি সমস্যা প্রকট ছিল। ‘মাইগ্রেশন ল’ করে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কেউ চাইলেই শহরে এসে যত দিন খুশি থাকতে পারবে না। আমরাও এমন একটা আইন করতে পারি। শুধু নগর বানালেই তো হবে না, সেটাকে স্বাস্থ্যকর হতে হবে।

সর্বশেষ খবর