মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মাগফিরাত তলব ও বদরের শিক্ষা

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মাগফিরাত তলব ও বদরের শিক্ষা

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। তাই মাগফিরাতের এই মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করতে হবে। ১. কলমা শাহাদাত পাঠ ২. ইসতিগফার পাঠ ৩. জান্নাত তলব ৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া। নবী করিম (সা.)-এর নবুয়ত ও রিসালাতের ঘোষণা প্রকাশ হয় রমজানেই। রমজানেই নাজিল হয় আল কোরআন এবং এ মাসের ১৭ তারিখ ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে আত্মরক্ষা ও প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আজ সেই ১৭ রমজান। বদর একটি ইতিহাস। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ বছরই প্রথম উভয় ঈদের প্রবর্তন হয়। বদরের বিজয়ের ১৩ দিন পর ১ শাওয়াল প্রথম ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা এবং ১০ জিলহজ ঈদুল আজহা পালন করা হয়। সব নবী-রসুল সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের বাণীর দাওয়াত দিয়েছেন অহিংস পন্থায়। আমাদের নবী (সা.)ও সেই সুন্দর-সঠিক পদ্ধতিতে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। কিন্তু তখন মক্কার কিছু কাফির ও মুশরিক অশান্তির সৃষ্টি করে। তিন বছর আল্লাহর হাবিব (সা.)কে ‘শিআবু আবিতালিব’-এ বন্দি করে রাখে। দাওয়াতি কাজে তায়েফ গমন করলে নির্মমভাবে নির্যাতনে নির্যাতনে জর্জরিত করে। মক্কায় ফিরে আসতে চাইলে প্রবেশে বাধা প্রধান করে। ‘দারুন নাদওয়া’য় শয়তানের পরামর্শে নবীজিকে হত্যার নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র করে। সব চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে নবুয়তের ১৩তম বছরে আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়ালে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরত করে মদিনায় চলে যান। মদিনার শান্তিকামী মানুষ এতে আনন্দিত হয়। পরম আনন্দে প্রিয় নবীর সোহবত গ্রহণ করতে থাকে। তা দেখে মুনাফিকদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই। বছর যেতে না যেতেই তারই প্ররোচনায় মুনাফিক চক্রের ষড়যন্ত্রে মক্কার কুরাইশ পৌত্তলিকরা হিজরতের দ্বিতীয় বছর ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ‘আশহুরে হুরুম’ বা যুদ্ধনিষিদ্ধ মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম রমজানেই মদিনা আক্রমণ করে বসে।

কুরাইশ বাহিনীর ১ হাজার সেনা, ১০০ ঘোড়া, ৭০০ উট ছিল। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দার বাবা উতবা, চাচা শায়বা, ভাই ওয়ালিদ এ দলের নেতৃত্বে ছিল। কুরাইশরা ৪৫০ কিলোমিটার দূরে এসে আক্রমণ করল। নবী (সা.) মদিনার পবিত্রতা ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মদিনা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে বদরে এসে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবি ছিলেন ৩১৩ জন, সঙ্গে মাত্র দুটি ঘোড়া ও ৭০টি উট। তাঁরা মদিনা থেকে তিন দিনে বদর গিরি প্রান্তরে পৌঁছালেন। এ যুদ্ধে মহান রব্বুল আলামিন মুসলমানদের ঐতিহাসিক বিজয় দান করেন এবং কাফিররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। বদরের অনেক শিক্ষা রয়েছে। দু-একটি এখানে উল্লেখ করা হলো। ১. বদর যুদ্ধের পর নবী (সা.)-এর অবস্থান ছিল পরাজিত আত্মসমর্পণকারীদের প্রতি কোনো প্রকার কষ্ট না দেওয়া। তিনি ক্ষমার পন্থা অবলম্বন করলেন। ২. বদরের বন্দিদের প্রতি হজরত যে আদর্শ ও ব্যবহার দেখালেন জগতের ইতিহাসে তার তুলনা মেলা ভার। হজরতের আদেশে মদিনায় আনসার ও মুহাজিররা সাধ্যানুসারে বন্দিদের নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে আপন আপন ঘরে স্থান দিলেন এবং আত্মীয়স্বজনের মতোই তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করলেন। বন্দিদের স্বগতোক্তি ছিল- ‘মদিনাবাসীদের ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হোক। তারা আমাদের উটে চড়তে দিয়ে নিজেরা পায়ে হেঁটে গেছে, নিজেরা শুষ্ক খেজুর খেয়ে আমাদের রুটি খেতে দিয়েছে।’ (বিশ্বনবী, গোলাম মুস্তফা, পৃষ্ঠা ১৬০)। নবী (সা.) বিজয়ের আনন্দের সুসংবাদ নিয়ে পালকপুত্র জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)ও কবি আবদুল্লাহ (রা.)-কে পাঠিয়ে দিলেন। আল আকিক উপত্যকা থেকে আবদুল্লাহ কুবার পার্বত্য এলাকায় এবং জায়েদ মদিনা নগরীর দিকে গেলেন। জায়েদের বাহন ছিল নবীজির প্রিয় ‘আল কাসওয়া’ নামক উট। তাঁরা দ্রুত এসে মদিনায় বিজয়ের বার্তা প্রচার করলেন। পরদিন নবী (সা.) বিজয়ী বেশে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলেন। গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ সরকারি কোষাগারে রেখে বাকি চার অংশ বদরে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করে দিলেন। মহান রব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি তিনি যেন বিষয়টিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করার তৌফিক দান করেন।

সর্বশেষ খবর