বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

জুনের মধ্যে সব কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশ বিএনপির

শফিউল আলম দোলন

জুনের মধ্যে সব কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশ বিএনপির

আগামী জুন মাসের মধ্যে দল ও অঙ্গ সংগঠনের সব কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। সে অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে কমিটি গঠন করে তা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাসহ সব ইউনিটে কাউন্সিল করে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চায় বিএনপি। এ জন্য জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ের কমিটি ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, জুন মাসের মধ্যেই সব কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হবে। কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সারা দেশে সর্বমোট ৮২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে ৬০টি জেলার কমিটি পুনর্গঠনের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, বাকিগুলোও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।

বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সপ্তাহখানেক আগে বগুড়া জেলার   সদর উপজেলা ও পৌর ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসে সিলেট, দিনাজপুর, ঢাকা, গাজীপুর জেলাসহ অন্তত ১৫ সাংগঠনিক জেলা ও ৫০টি ইউনিটে কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমরা আমাদের কমিটিগুলো গঠন করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। পরে করোনা মহামারি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সম্প্রতি দলটি মনে করছে, চলমান পরিস্থিতিতে সরকার চাপে রয়েছে। এ সুযোগে তারা দল পুনর্গঠনের কাজটি যেভাবেই হোক শেষ করতে চায়।

বিএনপির মোট ৮২টি সাংগঠনিক জেলা শাখার মধ্যে ৫৬টিতে তিন মাস মেয়াদে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। নির্দেশনা ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার সব ইউনিটে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দিতে হবে। এর মধ্যে শুধু নীলফামারী ও মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার কাউন্সিল যথাসময়ে সম্পন্ন করে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া সব জেলার আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নেতারা ইউনিটগুলোর কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেননি। এ নিয়ে হাইকমান্ড জেলা নেতাদের ওপর অসন্তুষ্ট। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টানা পাঁচ দিনব্যাপী ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। থানা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের পর জুনের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা শাখার সম্মেলন তথা কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক জেলাসহ সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট ও দিনাজপুর জেলারও কাউন্সিল হয়ে গেছে। এ ছাড়া শেরপুর, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির কাউন্সিল সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করছেন। সারা দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা শাখা এবং থানা-উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্সিল করে সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের কাজ চলছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি হবে ৫১ সদস্যের। মহানগর/পৌরসভা ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি হবে ৭১ সদস্যের। উপজেলা/থানা কাউন্সিল ও উপজেলা/থানা নির্বাহী কমিটি হবে ১০১ সদস্যের, পৌরসভা কাউন্সিল ও পৌরসভা নির্বাহী কমিটিও ১০১ সদস্যের হবে।

সূত্র জানায়, একই প্রক্রিয়া মেনে গত ১১ মার্চ বিএনপির বগুড়া সদর উপজেলা ও ১২ মার্চ পৌর ইউনিটে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। এতে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনে সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সাত সাংগঠনিক বিভাগের সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা বগুড়া গিয়ে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। এ বিষয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা যেমন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি, একইভাবে দলেও গণতন্ত্রের ভিত আরও মজবুত করতে চাই। সেই চিন্তা থেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পুনর্গঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন। তার চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতেই সারা দেশে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দলের তৃণমূলকে সাজানো হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বড় পরিসরে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। তখন দলের নেতাদের অধিকাংশই তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দেন। তারা বলেন, তৃণমূল শক্তিশালী না হলে কোনো আন্দোলনই সফল হয় না। একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগে পুনর্গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের কমিটি হচ্ছে, এতে দল অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল একই ইংগিত দিয়ে সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আপনারা দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন।

সর্বশেষ খবর