বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মুত্তাকিদের প্রশংসিত গুণাগুণ

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মুত্তাকিদের প্রশংসিত গুণাগুণ

মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে মুত্তাকিদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক তওবাকারী ও সংরক্ষণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা ক্বাফ : ৩১-৩২)

হাশরের ময়দানে একটি দৃশ্যের কথা এই আয়াতগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মুত্তাকিদের জন্য জান্নাতকে অদূরে এনে উপস্থিত করা হবে। হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত দেখা যাবে। ইশারা করে বলা হবে। (এই জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের সঙ্গে দুনিয়ায়।) এখন আমাদের নিশ্চই জানতে ইচ্ছে করছে। কে পাবে এই জান্নাত? উত্তর হলো এই জান্নাত পাবে মুত্তাকিনরা। যিনি (হাফিয) অর্থাৎ যে নিজের সত্তাকে কলুষমুক্ত রাখে। নিজেকে শুদ্ধ ও সাফ-সুথরা রাখে। কারণ আল্লাহ তো আমাদেরকে সাফ-সুথরা করে সৃষ্টি করেছেন। জন্মের সময় গুনাহের ময়লা আমার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি আমাকে গুনাহের ময়লা থেকে, পাপের ময়লা থেকে, অপরাধের ময়লা থেকে সাফ-শুদ্ধ রাখব। (হাফিয)-এর আরেক মর্ম, সংরক্ষিত। নিজেকে সংরক্ষণ করব সব অপরাধ থেকে। সংরক্ষণ করব আমি আল্লাহর সব বিধানগুলোকে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া হারাম-হালালের গণ্ডিকে। সংরক্ষণ করব আল্লাহর আহকামগুলোকে। আল্লাহ চাহেতো আমি ভালো থাকব। নিরাপদ থাকব। মুত্তাকিদের আরেক প্রশংসিত গুণ হলো, মুত্তাকিনরা মানুষ। গুনাহ হয়ে যেতে পারে। ভুল হয়ে যেতে পারে। হয়ে গেলে গুনাহর ওপর অনমনীয় থাকে না। গুনাহর ওপর দম ধরে থাকে না। বরং গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দিকে ঘুরে আসে। তওবার মাধ্যমে ফিরে আসে। কারণ গুনাহ করার মানেই হলো আল্লাহর কাছ থেকে নিজের চেহারা ফিরে গেল। একজন মুত্তাকিতো বাস্তবে ঈমানের মাধ্যমে, কালিমার মাধ্যমে, তাওহিদের মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহমুখী থাকেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি আমার চেহারা ওই সত্তার দিকে ঘুরিয়েছি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও জমিন।’ (সুরা আনআম : ৭৯) প্রকৃত অর্থে একজন মুত্তাকি সবসময় মনে করে থাকেন। আমি আল্লাহমুখী। আমার দিল আল্লাহর দিকে, আমার চেহারা আল্লাহর দিকে। পক্ষান্তরে অপরাধ হওয়া, গুনাহ হওয়া মানেই হলো, আমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম। আমার কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল। নাউযুবিল্লাহ! তাই তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়। তওবাকে তওবা এ জন্যই বলা হয় যে, তওবার মাধ্যমে বান্দা আবার সঠিক পথে ফিরে আসে। আমি তো অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম। নাহ, আমার রাস্তা তো এটা নয়। আমার রাস্তা একমাত্র আল্লাহর দিকে। আবার ফিরে এসেছি। আবার তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি। তওবার মানেই হলো ফিরে আসা। মুত্তাকিদের অন্য আরেকটি প্রশংসিত গুণ হলো মুত্তাকি ব্যক্তি সবমসময় ইসতিগফারের ওপর থাকার চেষ্টা করে। সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতিগফার পাঠ করেন। সবসময় তার অন্তরে থাকে আল্লাহর ভয়। আর বাস্তবেই ভয় তো আল্লাহ রব্বুল আলামিনকেই করা উচিত। আমি মানুষ। যিনি আমার সঙ্গে দয়ার মুআমালা করেন, তাকেই তো আমার ভয় করা উচিত। এখানে ভয় মানে কী? ভয় মানে মহব্বত মিশ্রিত ভয়। যা একজন প্রকৃত মুমিনের মাঝে বিদ্যমান থাকে। মোটামুটি কথা হলো মুত্তাকি হতে হলে দিলে-মনে আল্লাহর খাশিয়াত (ভয়) থাকা আর ওটার প্রভাবে হাফিয হওয়া। আল্লাহর বিধানকে খেয়াল করে চলা। বেদআত থেকে বেঁচে সুন্নাত মোতাবেক চলা। গুনাহ হলে তওবা করা। আল্লাহর দরবারে আল্লাহমুখী দিল নিয়ে হাজির হওয়া। এই চারটা বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে মুত্তাকি বলা হবে। রাব্বে কারিম আমাদের প্রকৃত মুত্তাকি হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর