বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ওএমএসে অর্ধেক হলো আটার বরাদ্দ

গমের ঘাটতি ৫৩ হাজার টন আরও দেড় লাখ টন চাল-গম চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের

উবায়দুল্লাহ বাদল

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএসের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। জনপ্রিয় হচ্ছে সরকারের এই কর্মসূচি। আর ওএমএস কেন্দ্রগুলোতে দিন দিনই লম্বা হচ্ছে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের সারি। অথচ ওএমএস কেন্দ্রগুলোতে আটার বরাদ্দ অর্ধেক করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে খাদ্য অধিদফতর বলেছে, আগামী জুন সমাপনীতে নিরাপত্তা মজুদ হিসাবে সরকারি গুদামে দুই থেকে আড়াই লাখ টন গম মজুদ থাকা জরুরি। কিন্তু বর্তমানে তা আছে ১ লাখ ৪৯ হাজার টন। সে অনুযায়ী ৫৩ হাজার টন গমের ঘাটতি আছে। এমতাবস্থায় সারা দেশের ওএমএস চালু রাখার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে কমপক্ষে আরও ১ লাখ টন চাল ও ৫০ হাজার টন গমের বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০ মার্চ চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও ৫ লাখ টন চাল-গম বরাদ্দ চেয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৩ লাখ টন চাল ও ২ লাখ টন আটা চাওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ওএমএস খাতে চালের বরাদ্দ রয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন, আর গমের বরাদ্দ ৪ লাখ ৬৪ হাজার টন। ওএমএস কর্মসূচিতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭০ হাজার টন চাল এবং ৩ লাখ ২৫ হাজার টন গম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ১ লাখ টন চাল এবং ১ লাখ ৩৯ হাজার টন গমের মজুদ রয়েছে। আসন্ন রমজান মাসে চালের দামের ঊর্ধ্বগতির সম্ভাবনা বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দেওয়াসহ খাদ্যশস্যের দাম সহনীয় রাখতে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব সিটি করপোরেশনে ৬৫টি নতুন ট্রাকসেল চালু করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত ওএমএস কেন্দ্রের (দোকান/ট্রাকসেল) মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩টি। এ ক্ষেত্রে ওএমএস কার্যক্রম চলমান রাখতে দৈনিক ২ হাজার ৬৩০ টন চাল এবং ২ হাজার ৮৯০ টন গম প্রয়োজন বলে জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর ১ এপ্রিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে খাদ্য অধিদফতর জানায়, বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী আগামী জুন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৬৭ টন গমের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জুন সমাপনীতে নিরাপত্তা মজুদ হিসাবে সরকারি গুদামে দুই থেকে আড়াই লাখ টন গম স্ট্যান্ডবাই মজুদ থাকা জরুরি। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুটি প্রস্তাব করা হয়। একটি হলো ঢাকা মহানগরসহ সব সিটি করপোরেশন, শ্রমঘন চার জেলা (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী) এবং সব জেলা সদরের পৌরসভার ৭৪৩টি কেন্দ্র চালু রেখে ওই কেন্দ্রের আটার বরাদ্দ অর্ধেক করা যেতে পারে। অপর প্রস্তাবে বলা হয়, ঢাকা মহানগর ও শ্রমঘন চার জেলার গমের বরাদ্দ ঠিক রেখে অন্য সব সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের পৌরসভাসমূহের আটার বরাদ্দ অর্ধেক করা যেতে পারে। চিঠিতে এসব প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে আটার বরাদ্দ কমানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে খাদ্য অধিদফতরের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন ওএমএস ডিলাররা। তাদের মতে, স্বল্প আয়ের মানুষের শেষ ভরসার জায়গা ওএমএস কেন্দ্রগুলো। সকাল ৮টা থেকেই কেন্দ্রগুলোতে মানুষের হুড়োহুড়ি লেগে যায়। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে স্বল্প আয়ের মানুষ চাল-আটা নিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফেরে। আটার বরাদ্দ কমানো হলে অর্ধেক মানুষকেই খালি হাতে ফিরে যেতে হবে। এ নিয়ে কেন্দ্রগুলোতে বড় ধরনের গণ্ডগোলও হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি কোনো ডিলার। রামপুরা বৌ-বাজারের একজন ডিলার বলেন, ওএমএসে চাল-আটার বরাদ্দ কমানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না। কারণ এই কর্মসূচির মাধ্যমে হাজারো গরিব মানুষ দুমুঠো ভাত-রুটি খেতে পারছে। সরকারের উচিত বরাদ্দ আরও বাড়ানো। কারণ চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। প্রায় অভিন্ন ভাষায় কথা বলেছেন খিলগাঁও ও মালিবাগ বাজারের একাধিক ডিলার।

ওএমএসের চাল-আটার ঘাটতি মেটাতে এবং ওএমএস চালু রাখার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে কমপক্ষে আরও ১ লাখ টন চাল ও ৫০ হাজার টন গমের বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল অর্থ সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ওএমএস খাতে চালের বরাদ্দ রয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন, আর গমের বরাদ্দ ৪ লাখ ৬৪ হাজার টন। ওএমএস কর্মসূচিতে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ লাখ ২৫ হাজার টন চাল এবং ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন গম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে শূন্য দশমিক ৪৪২ লাখ টন চাল এবং শূন্য দশমিক ৮৫২ লাখ টন গমের মজুদ রয়েছে। বর্তমানে যেভাবে ওএমএস কর্মসূচি চলছে তাতে আগামী জুনে বরাদ্দের কোনো চাল-গম অবশিষ্ট থাকবে না।

সর্বশেষ খবর