বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রমজানের আখেরি দশকের ইবাদত

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রমজানের আখেরি দশকের ইবাদত

পবিত্র রমজানের মাঝের দশক প্রায় শেষের পথে। বাকি এক দিন। ২০ রমজানের পর শুরু হবে আখেরি দশক। এ সময়ের মধ্যে আল্লাহর কাছে পূর্ণ মাগফিরাত কামনা করে জাহান্নাম থেকে পূর্ণ নাজাত চাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাস আল্লাহর বিশেষ করুণা ও দয়া পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। তাই সময় নষ্ট না করে সুযোগ কাজে লাগিয়ে রব্বুল আলামিনের কাছ থেকে নিজের জীবনের তামাম গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে হবে। আর শেষ দশক নাজাতের। যেমনটি হাদিসে এসেছে, নাজাত মানে মুক্তি। একটানা ২০ দিন সিয়াম সাধনার পর রোজাদার এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেখানে আছে অনেক কিছুর প্রাপ্তি। যা গণনায় শেষ করা যাবে না। মানুষের জন্য জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি থেকে মুক্তির চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে? এটাই তো অনেক বড় পাওনা। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের আর তৃতীয় দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির।’ (মিশকাত)

মাহে রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি দিন-রাতেই অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল হয়। নবী করিম (সা.) শেষ দশকের দিন ও রাতকে কেমন গুরুত্ব দিতেন হাদিসে সেসবের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। রমজানের প্রতিটি আমলের ভিতরই বিপুল সওয়াব ও ফজিলত রয়েছে। শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ ও মুবারকময় রাতের এত বড় সওয়াব থেকে যেন পরিবারের কোনো সদস্য বাদ না পড়ে সে ব্যাপারে সবাইকে পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। নবী করিম (সা.) শেষ দশকে অনেক আমল করতেন। যেমন ১. ইতিকাফ। ইতিকাফ শেষ দশকের বিশেষ আমল। নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ পালনে প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ পালন করেন।’ (বুখারি) অন্য হাদিসে হজরত আয়েশা (রা). বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ইন্তেকালের পর উম্মাহাতুল মুমিনিনরা ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম)

২. বেশি বেশি দোয়া করতেন। তাই আখেরি দশকে মসজিদে অবস্থান, বিনয়ীভাবে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পাঠ। বেশি বেশি ক্ষমা ও মাগফিরাতের চেষ্টায় চোখের পানি ফেলে কান্নাকাটি করা। নবী করিম (সা.) ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি’ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন। বিশেষ করে শেষ দশকের বেজোড় রাতে দোয়াটি গুরুত্বসহকারে পাঠ করা উচিত। ৩. কদরের রাত অন্বেষণ। এ বিজোড় রাতগুলো কদরের বরকতপূর্ণ হওয়ার আশা করা যায়। এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! যদি আমি শবেকদর পেয়ে যাই তখন কী দোয়া করব? নবী (সা.) ওই দোয়াটি পাঠ করতে বললেন।’ ৪. কোরআন তিলাওয়াত করতেন। রমজানের শেষ দশকের অতি গুরুত্বপূর্ণ আমল কোরআন তিলাওয়াত। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর। কেননা কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য কোরআন সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)

৫. রাত জাগরণ করতেন : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে রাত জাগরণ করতেন। পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তুলতেন এবং কোমর বাঁধতেন।’ (বুখারি)

আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানের আখেরি দশকের পূর্ণ হক আদায় করে ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর