শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মার্শাল ল দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল উন্নয়ন চায়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্শাল ল দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল উন্নয়ন চায়নি : প্রধানমন্ত্রী

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের সব অগ্রযাত্রা থমকে যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আসলে এ দেশের উন্নতি চায়নি। তাদের মনমানসিকতাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। যে কারণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

গতকাল ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিটাক, বিসিক ও বিএসইসি কর্তৃক সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক, আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। কিন্তু শিল্পায়নও আমাদের প্রয়োজন। এটা কর্মসংস্থান ও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়। জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ২০২টি দেশ বা অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করেছি। এ সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আমরা আলোকিত করব। আমরা আজকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়ন তৃণমূল ও গ্রামভিত্তিক করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেহেতু প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে উপযুক্ত জনশক্তি যাতে গড়ে ওঠে তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। কৃষিপণ্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে খাদ্য, ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ, ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হব, পাশাপাশি আমাদের নিজের দেশের মানুষেরও যেহেতু ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, সেখানেও বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। তাই আমরা প্রতিটি শিল্প, কলকারখানা থেকে শুরু করে যত প্রতিষ্ঠান তৈরি করছি, সেটা পরিবেশবান্ধব যেন হয় তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের সামনে আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তা পালন করতে হবে। ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় চীন ও জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ও বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উন্নয়নে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, ফলে বর্তমানে শিল্পনগরীতে (বিসিক) বিনিয়োগের পরিমাণ ৪১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা এবং ৮ লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং গবেষণার মাধ্যমে আমদানিবিকল্প যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিটাকের টুল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (টিটিআই) দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। আমাদের সরকার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিসহ এ সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য স্থানীয়ভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টেস্টিং সুবিধাসহ বিটাকের টুল ইনস্টিটিউট দেশি প্রযুক্তিতে বিভিন্ন মেশিন ও প্লান্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহায়ক হবে। তাতে ভবিষ্যতে মূলধনী যন্ত্র আমদানিতে বিনিয়োগ কমবে, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) লাইটিং সামগ্রী উৎপাদনকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি উন্নত, গুণগত মানসম্পন্ন ফ্লোরেসেন্ট টিউবলাইট, সিএফএল বাল্ব, এলইডি বাল্ব ও এলইডি টিউবলাইট উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। বিএসইসির অধীন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের উদ্যোগে ‘এলইডি লাইট অ্যাসেম্বলিং প্লান্ট ইন ইটিএল’ স্থাপনের ফলে এর উৎপাদিত পণ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করেছেন। একদিকে যেমন দারিদ্র্য বিমোচন করা, দেশের মানুষের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নতি করা এবং বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। ডেল্টা প্ল্যান আমরা প্রণয়ন করেছি। ফলে জলবায়ু অভিঘাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায়, তা নিশ্চিত করবে।

সর্বশেষ খবর