শিরোনাম
শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পাতালেও মিলছে না পানি

ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ দিনে দিনে বাড়ছে। পানির স্তর ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১ হাজার ৫০০ ফুট গভীরেও মিলছে না পানির স্তর। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জাতীয় গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় অর্ধেক। পদ্মায় দেওয়া ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে এ অঞ্চলের ৮৫টির বেশি নদ-নদী বছরের বেশির ভাগ সময় শুষ্ক থাকে। নদীগুলোতে সারা বছর পানি না থাকার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ হওয়ার সুযোগ পায় না। সব মিলিয়ে ভারসাম্যহীন অবস্থায় চলছে পানিব্যবস্থা। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক অ্যাটলাস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের প্রায় ২২টি জেলা খরার ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে খুবই উচ্চ ঝুঁকিতে আছে রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, দেশের জাতীয় বৃষ্টিপাতের গড় ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটার। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার বা কোনো কোনো এলাকায় তারও কম বৃষ্টিপাত হয়। একদিকে বৃষ্টিপাত কম, অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানি দিনে দিনে নিচে নেমে যাচ্ছে। যে যেমন করে পারছে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে যাচ্ছে। সে কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) হিসাব অনুসারে, বরেন্দ্র অঞ্চলের বার্ষিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭১০ মিলিয়ন ঘন মিটারের বেশি। বিএমডিএর গভীর নলকূপ ছাড়াও বেসরকারি নলকূপ দিয়েও এসব পানি উত্তোলন হচ্ছে। যে পরিমাণে পানি উত্তোলন হয় তা দিয়ে এক বিঘা আয়তনের দুই মিটার গভীরতাবিশিষ্ট ১৮ লাখ পুকুর ভরে দেওয়া যাবে। বিএমডিএ ছাড়াও অনেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিভিন্নভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। ২০২১ সালে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) বরেন্দ্র অঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা চালায়। হাইড্রোলজিক্যাল মডেলিংয়ের মাধ্যমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর ৫০টি জায়গায় প্রায় দেড় হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত বোরিং করে এই জরিপ চালিয়েছে ওয়ারপো। জরিপে কোথাও কোথাও পানি স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

জরিপে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পাচন্দর ইউনিয়ন, মুন্ডুমালা পৌর এলাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁর পোরশার ছাওড় ইউনিয়ন এবং সাপাহার উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশেষ কয়েকটি জায়গায় পানির স্তরই পাওয়া যায়নি।

বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, বিএমডিএ ১ হাজার ফুট পর্যন্ত গভীরে গিয়েও পানি পায়নি। সেটি কয়েকটি এলাকায়। ভূগর্ভস্থ পানি শুধু বিএমডিএ একা তুলছে না। ব্যক্তিমালিকানায় সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি তুলে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তাতেও পাতালের পানি কমছে। কিন্তু বৃষ্টিপাত হচ্ছে না বলে পানির রিচার্জও হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি জামাত খান বলেন, গোটা উত্তরাঞ্চলের পাতাল প্রায় পানিশূন্য। পদ্মায় প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে কৃষিভান্ডার উত্তরাঞ্চল নষ্ট হয়ে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর