শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

চাষাবাদে ঘটছে পরিবর্তন

কয়েক সপ্তাহ ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলে সূর্য যেন আগুন ঝরাচ্ছে। ১৫ এপ্রিল দীর্ঘ আট বছর পর রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল দিনটিতে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তীব্র দাবদাহে তপ্ত বরেন্দ্র ভূমি। আবহাওয়ার কারণে মাটির ওপরের স্তর হয়ে পড়ছে শুষ্ক। অপর দিকে কমেছে বৃষ্টিপাত, নেমেছে ভূগর্ভস্থ পানি। সব মিলিয়ে বরেন্দ্রের কৃষিতে পরিবর্তন ঘটছে। যেসব ফসল অল্প পানি ব্যবহারে জন্মায় সেসব ফসলের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।

বরেন্দ্রের মাঠ। যত দূর চোখ যায় বিস্তর এলাকাজুড়ে ধান আর ধান। এমন দৃশ্য বরেন্দ্রে স্বাভাবিক হলেও ধান উৎপাদনে পানি ব্যবহারে আছে কপালে চোখ উঠে যাওয়ার মতো তথ্য। এক কেজি ধান উৎপাদনে ১ হাজার ৫০০ লিটার থেকে ২ হাজার লিটার পানি খরচ হয়ে থাকে, যার বেশির ভাগ ব্যয় হয় ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। পানি সংকটের কারণে চাষিরা ধানের বিকল্প আবাদের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। এক যুগে একটু একটু করে অনেকখানি বদলে গেছে বরেন্দ্রের কৃষি। পানির সমস্যা একদিকে যেমন প্রকট হয়ে উঠছে, অন্যদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাটির ওপরের স্তর তপ্ত হয়ে উঠছে, যার কারণে বেশি সেচজনিত ফসলে বাড়ছে খরচ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে রাজশাহীতে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর, যা এখন ১৮ হাজার হেক্টর। পেয়ারাবাগান ছিল ৬৮২ হেক্টর, এখন ৫ হাজার হেক্টর। বেড়েছে সবজির চাষ। ২০১০ সালে রাজশাহীতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয় ১৯ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমিতে। আর ২০২০ সালে সবজি চাষ হয় ২৭ হাজার ৩৩৯ হেক্টর জমিতে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান মিঠু জানান, মাত্র বছর ১০ আগে ধানে যে পরিমাণে সেচ লাগত, এখন এর চেয়ে দ্বিগুণ লাগে। বৃষ্টি নেই। আবহাওয়ার উত্তাপ বেশি হওয়ার কারণে মাটি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে সেচের পরিমাণ বাড়ছে।

মিঠু জানান, পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে একসঙ্গে সব জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি গভীর নলকূপের অধীনে যে জমি থাকে, তার অর্ধেক ধান চাষ করা হয়। অন্য জমিগুলোতে কম পানি লাগে এমন রবিশস্য লাগানো হয়, যাতে পানির সমন্বয় হয়। কিন্তু তাতেও সমাধান হচ্ছে না। এ অঞ্চলে সময়ে বৃষ্টির দেখা মেলে না। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের চেয়ে অন্য ফসল চাষের পরিমাণ বেড়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ধানের বদলে অন্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পানিসাশ্রয়ী ফসলের চাষ বাড়াতে মাঠপর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর