শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতা মকবুল গ্রেফতার ২৬ উসকানিদাতা চিহ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি নেতা মকবুল গ্রেফতার ২৬ উসকানিদাতা চিহ্নিত

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল বিকালে রাজধানীর আদাবরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, মামলার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে পাঠানো হবে। মকবুল নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি।

ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামে যে দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব থেকে গত সোমবার রাতে নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, সেই দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ হওয়া। তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন মকবুল হোসেন। তিনি শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, বিএনপি করার কারণে পুলিশ তাকে এ মামলার আসামি করেছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি, নাহিদের পরিবার একটি ও মুরসালিনের পরিবার একটি মামলা করে। এর মধ্যে নাহিদ ও মুরসালিনের মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের মামলায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের পুলিশ চিহ্নিত করেছে। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জখম ও ভাঙচুর করার অপরাধে নিউমার্কেট থানায় পুলিশের করা মামলায় অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন ১ নম্বর আসামি। এদিকে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনার পর পুরনো আমেজ ফিরেছে নিউমার্কেট ও এর আশপাশ এলাকায়। আগের মতোই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে এলাকাটি। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত পুরনো সময়ের মতোই বসেছে ফুটপাথের দোকানিরা। ঈদের কেনাকাটায় সারা দিন ক্রেতা সমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চাঁদনি চক মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটসহ ওই এলাকার সব মার্কেটই। নিউমার্কেটের জুয়েলারি দোকানি কবির হাওলাদার বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে মার্কেটে ক্রেতা বাড়তে থাকে। ভেবেছিলাম বিকিকিনি ভালো হবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে নতুন কোনো ক্রেতা মার্কেটে আসতে পারেনি। নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলার মধ্যে দুটি হত্যা মামলা। অন্য দুটি মামলা করেছে পুলিশ বাদী হয়ে। গতকাল বিকালে দুটি মামলা ডিবিতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কাইয়ুম। এর আগে, ডেলিভারিম্যান নাহিদ নিহতের ঘটনায় বুধবার রাতে একটি হত্যা মামলা হয়। নিহত নাহিদের চাচা সাঈদ এ মামলার বাদী। এটি ডিবির রমনা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া দোকান কর্মচারী মুরসালিন নিহতের মামলাটিও ডিবির কাছে হস্তান্তরের কথা জানিয়েছেন ওসি স ম কাইয়ুম। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, সেসব নিয়ে কাজ চলছে।

সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় ঢাবি সাংবাদিক সমিতির উদ্বেগ : ১৮ ও ১৯ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকারদের সংঘর্ষের ঘটনার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি মামুন তুষার ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রুবেল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় দীপ্ত টিভির সাংবাদিক আসিফ সুমিত, মানবজমিনের শুভ্র দেব, ডেইলি স্টারের প্রবীর দাস ও বাংলা ট্রিবিউনের শাহেদ শফিকসহ কয়েকজন সাংবাদিক হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হন। বিবদমান দুই পক্ষের সমর্থকরা যেভাবে সাংবাদিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন, তা কাম্য নয়। এ ঘটনার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পদদলিত করা হয়েছে। এ ঘটনা একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্মম দৃষ্টান্ত। জানা গেছে, পরিবারের তিন ছেলের মধ্যে বড় ছিলেন নাহিদ। অভাবের সংসারে ১০ বছর বয়সেই আয়ের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তখন তিনি একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। সর্বশেষ কাজ শুরু করেন একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারিম্যান হিসেবে। ঘটনার দিন মঙ্গলবার কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থল এলিফ্যান্ট রোডে যাচ্ছিলেন। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন নাহিদ। তার শরীরে একাধিক স্থানে ক্ষত চিহ্ন পান ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। এদিকে, নিহত মুরসালিনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার কালাইনগরে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মুরসালিন দ্বিতীয়। কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরে স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু, মেয়ে হুমায়রা ইসলাম লামহা (৭) ও ছেলে আমির হামজাকে (৪) নিয়ে থাকতেন। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘হাটবাজার’ নামে শার্ট-প্যান্টের দোকানের সেলসম্যান ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে সংঘর্ষ চলার সময় তিনি আহত হন। এরপর ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান। এর আগে, সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বুধবারও এ সংঘর্ষের রেশ চলতে থাকে। ফলে নিউমার্কেট ও এর আশপাশের সব মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিষয়টি সমঝোতা হলে বৃহস্পতিবার মার্কেট খুলে দেওয়া হয়। মার্কেটগুলো দুই দিন বন্ধ থাকায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ী মালিকদের। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে নাহিদ ও মুরসালিন মারা যান। ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় চার মামলায় ১ হাজার ৫৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ২৬ জনকে। গতকাল নিহত নাহিদ ও মুরসালিনের মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর