শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
তৃণমূলে আওয়ামী লীগের চিঠি

নির্বাচনের আগে ঢেলে সাজানো হচ্ছে ১৪ দল

রফিকুল ইসলাম রনি

জোট শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করছে আওয়ামী লীগ। নিজেদের ভিতরের অনৈক্য দূর করে সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে ভোটের আগে সংগঠন শক্তিশালী করাই লক্ষ্য। এ জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অতি সম্প্রতি তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়েছেন।

জোট সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সে কারণে নিজেদের ভিতরের ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসন ও জোট শরিকদের দূরত্ব দূর করা হচ্ছে। সম্পর্ক ঝালাই চলছে। জেলা-উপজেলায় যে জোটের কমিটি রয়েছে, সেগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যারা সংগঠনকে সময় দিতে পারবেন তাদের সংগঠনে আনা হচ্ছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করবে ১৪ দল। জানা গেছে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে হলেও আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করায় জোট শরিকরা ক্ষুব্ধ হন জোট প্রধান দলের ওপর। জোটের বৈঠকে কিংবা বাইরের কর্মসূচিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কথাবার্তা বলে আসছিলেন। গত ১৫ মার্চ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন জোট নেতারা। এ সময় তারা পাওয়া-না পাওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে জোটকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদ দেন। এ সময় জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘জোট আছে, জোট থাকবে। আগামীতেও একসঙ্গে ভোট করা হবে।’ সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। যেসব জেলায় ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের মতভেদ রয়েছে অথবা একসঙ্গে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় না, সেখানে তাদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃণমূলকে শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগকে চিঠি পাঠিয়েছেন। আশা করছি, চিঠি পাওয়ার পর তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জোটকে আরও বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করবেন।’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অপশক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জোটের কার্যক্রম আরও সক্রিয় করতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দল যখন গঠন হয় তখন তৃণমূল সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে সম্পর্কটা নিচের দিকে নামতে থাকে। আগে প্রশাসনিকভাবেও বিভিন্ন জাতীয় দিবস বা আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হতো। কিন্তু এখন এগুলোর কিছুই হয় না। তিনি আরও বলেন, এখন এই চিঠি দেওয়াকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ চিঠি পেয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। তারা প্রথমে দলের ভিতরে আলোচনা করছেন। এরপর জোট শরিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এরপর কমিটিগুলো নতুন করে গঠন করবেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৃণমূলে ১৪ দলকে শক্তিশালী করতে দলের সাধারণ সম্পাদক আমাদের চিঠি পাঠিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরেই আনুষ্ঠানিক বৈঠক করব। তিনি বলেন, শুধু ১৪ দলকে শক্তিশালী করাই নয়, যেসব জেলা-উপজেলার সম্মেলন হয়েছে, কিন্তু কমিটি হয়নি, সেগুলোতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করার জন্যও আরেকটি চিঠি পেয়েছি।

সর্বশেষ খবর