শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
শূন্যপদ না থাকলেও পদায়ন

মাউশির ভুলে বেতনবঞ্চিত ৪৮০ মাধ্যমিক শিক্ষক

আকতারুজ্জামান

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর থেকে শূন্যপদের তালিকা পেয়ে ২ হাজার ৬৫ জন শিক্ষককে বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পদায়নের পর ৪৮০ জন সহকারী শিক্ষক কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, মাউশি অধিদফতরের মাধ্যমিক শাখার ভুলে বেতনবঞ্চিত রয়েছেন এই শিক্ষকরা। কারণ মাউশির মাধ্যমিক শাখা বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও এ তালিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদের  কোনো মিল ছিল না। মাউশি অধিদফতর  শূন্যপদের কথা বললেও   কার্যত কোনো কোনো বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদই ছিল না। তবু করা হয়েছে পদায়ন। ফলাফলে দেখা গেছে, একটি বিষয়ে চারজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও পদায়নের পর আটজন বা ১০ জন রয়েছেন। অতিরিক্ত শিক্ষকরা গত ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা সুবিধার বাইরে রয়েছেন। সরকারি এই শিক্ষকরা এখন অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। কীভাবে ঈদ উৎসব পার করবেন সে শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখা সূত্র জানান, মাধ্যমিক শিক্ষকদের বদলি হওয়ার কথা বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের বিপরীতে। অথচ মাউশি অধিদফতর বছরের পর বছর এ নিয়মের কোনো অনুসরণ না করে শুধু শূন্যপদ থাকলেই বদলি করেছে। দেখা গেছে, কোনো স্কুলে একটি বিষয়ের জন্য চারজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও অনেক স্কুলেই ছয় বা আট জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এক বিষয়ের শিক্ষক অতিরিক্ত থাকলেও অন্য বিষয়ে হয়তো কোনো শিক্ষকই নেই।

অভিযোগ রয়েছে, মাউশি অধিদফতরের বিদায়ী মহাপরিচালক, পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন ও সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) আমিনুল ইসলাম টুকুর কারণেই এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ তাঁরা অতীতে শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের শূন্যপদ আমলে নেননি।

মাউশি অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অতীতে আমরা শূন্যপদ দেখেই বদলি করেছি, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ শূন্য আছে কি না তা আমলে নেওয়া হয়নি। তাই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বিষয়ভিত্তিক অতিরিক্ত ৪৮০ শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই শিক্ষকদের বদলি সমন্বয় করে এ সমস্যা সমাধান করা হবে।’ কবে বদলির আদেশ জারি হবে সে ব্যাপারে সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম টুকুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। তবে টুকুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। কবে নাগাদ শিক্ষকদের সমন্বয় করা সম্ভব হবে সে ব্যাপারেও জানাননি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদের থেকে অতিরিক্ত শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য মোট পদ রয়েছে ৪টি। কিন্তু এ স্কুলে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ১০ জন শিক্ষক কর্মরত। একইভাবে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৪টি পদের বিপরীতে অতিরিক্ত আরও ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে গণিত শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬টি। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে গণিত বিষয়ের জন্য নয়জন শিক্ষক কর্মরত। একইভাবে পদের চেয়ে বেশি শিক্ষক রয়েছেন বরিশালের শহীদ আরজু মণি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, পাবনা জিলা স্কুল, পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, খুলনা জিলা স্কুল, রংপুর জিলা স্কুল, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, কুমিল্লা জিলা স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্কুলে।

ভুল শূন্যপদে পদায়নের পর অতিরিক্ত শিক্ষকদের সমন্বয় করতে গত মার্চে পৃথক আদেশে দেশের বিভিন্ন স্কুলের ৪৭৩ শিক্ষককে বদলি করা হয়। পরে দেখা যায়, স্কুলের সবচেয়ে বয়স্ক ও প্রবীণ শিক্ষককে দূরদূরান্তে বদলি করা হয়েছে। অনেক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে যাদের ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে চাকরির বয়সই শেষ হয়ে যাবে। এ ঘটনায় সারা দেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন শিক্ষকরা। এরপর ১৬ মার্চ ৪৭৩ শিক্ষককে বদলির আদেশ বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। বদলি বাতিলের পর অতিরিক্ত শিক্ষকদের সমন্বয় করে অন্যত্র বদলি না করায় ৪৮০ শিক্ষকের বেতন না পাওয়া সমস্যার সমাধানও হয়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অতিরিক্ত শিক্ষক সমন্বয়ের জন্য ৪৭৩ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল সিনিয়র ও বয়স্ক শিক্ষক যাঁদের এক বা দুই বছর পরই চাকরির মেয়াদ শেষ হবে তাঁদের বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি ছিল খুবই অমানবিক। পরে এঁদের বদলি বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। এর আগে বিষয়ভিত্তিক বদলি না হওয়ায় অতিরিক্ত শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। শিক্ষকদের বেতন জটিলতা শিগগিরই সমাধান হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ‘মাউশি অধিদফতর থেকে পাওয়া শূন্যপদের তালিকা ধরেই শিক্ষকদের পদায়ন করা হয়েছিল। অথচ পদায়নের পর দেখা গেছে বিষয়ভিত্তিক অনেক অতিরিক্ত শিক্ষক হয়েছেন। এর ফলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আশা করি মাউশি অধিদফতর শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান করবে।’

সর্বশেষ খবর