শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশের উন্নতির পথে মহামারির চেয়েও বড় বাধা দুর্নীতি

-এম এ মতিন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দেশের উন্নতির পথে মহামারির চেয়েও বড় বাধা দুর্নীতি

ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী সংস্কৃতি বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রশাসনিক দুর্নীতি দেশের উন্নতির পথে করোনা        মহামারির চেয়েও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন। এম এ মতিন বলেন, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো উন্নয়নে মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু সরকারি দল ও প্রশাসনের একটি অংশের বেপরোয়া আচরণ-দুর্নীতির কারণে সরকারের উন্নয়ন-সফলতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আশি ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। ২০ ভাগ বিলাসী জীবনযাপন করছে। কোটিপতির সংখ্যা বছর বছর বেড়েই চলছে। আর সাধারণ মানুষ ক্রমান্বয়ে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। ধনী-গরিবের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা দেশের জন্য অশনিসংকেত। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এম এ মতিন বলেন, ‘৯০ সালে দেশের সুফিবাদি জনতার একক রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসলামী ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার পর প্রতিটি জাতীয় স্থানীয় নির্বাচনে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তাব দিলে বিবেচনায় রাখব। নইলে এককভাবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যতই সদিচ্ছা থাকুক না কেন নির্বাচনকালীন সময়ে সাংবিধানিকভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ইসির অধীনে না থাকলে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা জাতিকে উপহার দিতে পারবে না। ইভিএমে ভোটাধিকারের সুষ্ঠু প্রয়োগ হচ্ছে না। দলের সাংগঠনিক অবস্থা প্রসঙ্গে এম এ মতিন বলেন, প্রতিটি আন্তর্জাতিক-জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। যে কোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে আছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, অভাবের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং মাদক ব্যবসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। সরকারদলীয় কিছু নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকারি সাহায্য সুষম বণ্টন হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে এম এ মতিন বলেন, সরকারদলীয় কিছু নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তারা শুধু দুর্নীতি করছে তা নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, নিরীহ মানুষদের ওপর জুলুম নির্যাতন এমনকি স্বার্থের জন্য বা এলাকাভিত্তিক আধিপত্য ধরে রাখতে নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের পর্যন্ত খুন করতে দ্বিধাবোধ করছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। এসব সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজদের অপরাধ দমনে এবং শাস্তি প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের জন্য জনগণকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। এদের দৌরাত্ম্যের কাছে সাধারণ মানুষ আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। এম এ মতিন বলেন, পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ অবস্থা হতে উত্তরণে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন আইন করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার এ প্রবণতাটা রোধ করতে পারে। তিনি বলেন, বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতির অবসান না হলে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত একমাত্র ইসলামী দল হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সবাইকে সহনশীল পন্থায় সমঝোতা-পারস্পরিক সুসম্পর্ক উন্নয়নে সমাধান বের করার আহ্বান জানাচ্ছে। এদেশ আমাদের।

সর্বশেষ খবর