শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রমজানের শেষের দিনগুলো কাটুক ইবাদতের মাধ্যমে

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রমজানের শেষের দিনগুলো কাটুক ইবাদতের মাধ্যমে

রোজা ও ইবাদত যদিও শব্দ দুটি। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় উভয় শব্দের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তা হলো মাওলার সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদন পেশ করা। চাই তা রোজার মাধ্যমে হোক বা যে কোনো ইবাদতের মাধ্যমেই হোক। সুরাতুল ফাতেহার মধ্যে আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন (ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইনু) “হে আল্লাহ আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই।” আল্লাহর কাছে চাওয়ার মাধ্যম অনেক আছে। যেমন দোয়া, নফল নামাজ, তেলাওয়াতে কোরআন ও জিকির-আসকার ইত্যাদির মাধ্যম। এখন থেকে রমজানের যতটুকু সময় হাতে আছে তা নষ্ট না করে ইবাদতের মাধ্যমে কাটানো উচিত। কারণ সময় কারও জন্য বসে থাকে না। সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে এক সময় শেষ হয়ে যায়। যেমন আমাদের হায়াত বাড়তে বাড়তে এক সময় শেষ হয়ে যাবে। সময়ও তাই। সুতরাং সময় থাকতে সময়ের মূল্যায়ন করা চাই। এখন রমজানের শেষ দশক চলছে। এক সময় শাওয়ালের চাঁদ উঠে রমজানের রোজার সমাপ্তি ঘটাবে। পবিত্র মাহে রমজান পেয়েও যদি কোনো ব্যক্তি নিজের পাপ ক্ষমা করাতে না পারে, বিষয়টি তার জন্য খুবই আফসোসের। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয়নবী হজরত রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে রমজান মাস পেয়েও নিজেকে পাপমুক্ত করতে পারল না, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত” (মুসনাদে বাজজার)। রমজানের শেষ দশক রোজাদার মানুষের জন্য অনেক বড় নেয়ামত ও অসাধারণ এক পুরস্কার। আল্লাহ রাব্বুল আমাদের ওপর কত দয়াবান দেখুন! তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুনাহ মাফ করতে শুধু বাহানা খোঁজেন। কীভাবে বান্দাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিতে পারেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে তিনি আয়াত নাজিল করেছেন। (ফাসতাগফেরু রব্বাকুম ইন্নাহু কানা গাফ্ফারা) “তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল” (সুরা নুহ-১০)। মাহে রমজানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, এটিই হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া ইতিকাফের সময়। আবার লায়লাতুল কদর পাওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এই শেষ দশকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ” (সুরা কদর-৩)। রসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরে জাগরণ করে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়” সুবহানাল্লাহ! (সহিহ বুখারি)। অন্যত্র আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে যেন সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়” (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এ জন্য রসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বেশি বেশি ইবাদত করতেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘‘রসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন” (সহিহ মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, শেষ দশক শুরু হলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করতেন। পরিবারের লোকদেরও জাগ্রত রেখে ইবাদত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি নিজেও অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন (ইবাদত করার জন্য)। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।

আমাদের সব রোজাদারের রমজানের শেষ সময় ইবাদত-বন্দেগিতে কাটুক মহান আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করছি। আমিন।

সর্বশেষ খবর