রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৬ মাসে অভিযুক্ত ২২৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৬ মাসে অভিযুক্ত ২২৪৪

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গত ২৬ মাসে মোট অভিযুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ২৪৪ জন। মোট অভিযুক্ত আটক হয়েছেন ৮৪২ জন এবং মোট মামলার সংখ্যা ৮৯০টি। গতকাল সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ওয়েবিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন- বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রকল্পটি ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির অর্থায়নে পরিচালিত হয়। এ প্রতিবেদনটি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার অনুমোদিত প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম, অভিযুক্ত বা অভিযুক্তের পরিবার এবং তাদের নিকটজন, অভিযুক্তের আইনজীবী এবং থানা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা।  সিজিএস এর উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ বলেন, ২৬ মাসের গড় হচ্ছে প্রতি মাসে ৮৬ জনের বেশি অভিযুক্ত হন, গড়ে ৩২ জন আটক হন এবং গড়ে মামলা হয় ৩৪টির বেশি। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত অভিযুক্ত হয়েছেন ৯১৩ জন, আটক হয়েছেন ২৭৩ জন এবং মামলার সংখ্যা ৪২৬টি। মাসে গড়ে অভিযুক্ত  হয়েছেন ৬০ দশমিক ৮৬ জন, আটক হয়েছেন ১৮ জন। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযুক্তের সংখ্যা এক হাজার ৩৩১ জন, আটক হয়েছেন ৬০৯ জন এবং মামলার সংখ্যা ৪৬৪টি। মাসে গড়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন ১৪৭ জন করে, আটক হচ্ছেন ৬৭ জন করে এবং মামলা হয় ৫১টির বেশি। অভিযুক্তদের পেশা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে ড. আলী রীয়াজ বলেন, মোট পেশা পাওয়া গেছে ৮২০ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেশার মানুষ হচ্ছেন রাজনীতিবিদ (২৫৪ জন) এবং পরবর্তীতে আছেন সাংবাদিক (২০৭ জন)। অভিযুক্তদের বয়স বিবেচনায় ওঠে আসে তরুণরাই এ মামলার দ্বারা সবচেয়ে বেশি হেনস্তার শিকার হন। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়। আটকদের মধ্যে যাদের পেশা পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছেন রাজনীতিবিদরা (২৫.৪০ শতাংশ) এবং পরবর্তীতে আছেন সাংবাদিকরা (১৮.৭৩ শতাংশ)। আটকদের মধ্যে ছাত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বেশি বলে তিনি গবেষণায় উল্লেখ করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত এবং আটক হয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা উল্লেখ করে ড. আলী রীয়াজ বলেন, শিক্ষকরা এ আইনে অভিযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আটক হন। এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও রয়েছেন ভুক্তভোগীর তালিকায়। এ আইনের অধীনে অভিযোগকারী কারা সেটি গবেষণার মাধ্যমে ওঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন রাজনীতিবিদরা (৪০.৫৫ শতাংশ)। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও মামলা করে থাকেন, যেমন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা। সরকারের সমর্থন আছে এ রকম মামলার পরিমাণ ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। ওয়েবিনারে আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর এবং আর্টিক্যাল নাইনটিন এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল। সভাপতিত্ব করেন সিজিএস এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

 

সর্বশেষ খবর