মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
আজ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে ৩৩ হাজার পরিবার

নিজ বাড়িতেই এবার ঈদ বেলাল আলমগীর মৌসুমীদের

রফিকুল ইসলাম রনি ও হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা থেকে

নিজ বাড়িতেই এবার ঈদ বেলাল আলমগীর মৌসুমীদের

বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঈদ আনন্দ হচ্ছে সেমাই, নতুন জামা, পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলন। কিছু মানুষের জন্য এবারের ঈদ ভিন্ন রকম আনন্দের। এবারের ঈদ ‘সোনার বাংলার ঈদ’। এবার আছে মাথার ওপর ছাদ, পায়ের নিচে মাটি- ৬০ বছরে এই প্রথম নিজ ঘরে ঈদ করব। এখন আমাদের কাছে যেন অন্য রকম আনন্দ। কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরসহ বাড়ি পাওয়া বৃদ্ধ বেলাল হোসেন। একই কথা বললেন এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের  সুফলভোগী মর্জিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘স্বামীর কোনো জমি ছিল না। সন্তানরাও জমির মালিক হতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরসহ জমির মালিক বানিয়েছেন। আমরা মহানন্দে আছি।’ শারীরিক প্রতিবন্ধী বেলাল হোসেনের বয়স ৩২ বছর। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বাবা হারিয়েছেন। নিজেদের জায়গাজমি কিছুই ছিল না। থাকতেন ভাড়া বাড়িতে। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বয়স ও অসুস্থতার কারণে সে কাজও নেই। বেলালদের জীবন যেন অন্ধকারে আচ্ছন্ন। বেলাল হাঁটতে পারেন না। হাতেও শক্তি নেই। কথাও কিছুটা অস্পষ্ট। নিরুপায় ভিক্ষুকের জীবন এখন তার। বেলালের সেই কষ্টের জীবনে নতুন দিশা হয়ে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় বরগুনা শহরের খুব কাছেই সদর উপজেলার খাজুরতলা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছেন বেলাল। মা ও ভাইকে নিয়ে সেখানে থাকতেও শুরু করেছেন। প্রতিবন্ধী বেলালের চোখে-মুখে এখন নতুন স্বপ্ন। বেলাল বলেন, ‘এখন আর আমার কোনো চিন্তা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি আমার মতো অসহায় মানুষের জন্য এত কিছু করে দিয়েছেন। আমি চাই আমার মতো আরও যারা রয়েছে সবাই যেন স্থায়ী ঠিকানা পায়।’ বাড়ি পাওয়ার পর নতুন করে জীবন শুরুর কথাও ভাবছেন বেলাল। বললেন, ‘এখন বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে আজ ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর পাচ্ছেন গৃহহীন ও ভূমিহীনরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে দেশের চার উপজেলায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উপহারের ঘর হস্তান্তর করবেন। ঘরগুলো স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেওয়া হচ্ছে। স্বামী না থাকলে শুধু স্ত্রীর নামে দেওয়া হচ্ছে। এ ৩৩ হাজার নতুন ঘরে প্রায় দেড় লাখ মানুষ স্থায়ী ঠিকানা পাবেন।

বরগুনা সদরের আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ঘর পাওয়া মানুষেরা ইতোমধ্যে সেখানে বসবাস শুরু করেছেন। এখানে মোট জমি রয়েছে ১১ দশমিক ৪৫ একর। ইতোমধ্যে নির্মিত হচ্ছে ৩২৯টি ঘর। আরও ১৫০টি ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ কেন্দ্র। এখানে ঘর বরাদ্দ পাওয়া উপকারভোগীর মধ্যে ২২ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য, ১০ জন ভিক্ষুক, ২০ জন শারীরিকভাবে অক্ষম, ২৮ জন স্বামীপরিত্যক্তা, ৪১ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য রয়েছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তারা ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একত্রে বসবাস করে এক অসাধারণ নজির স্থাপন করেছেন। এখানে ঘর পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের শিমু আক্তার। ৩০ বছরের শিমুকে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাড়ি ও পরিবার ছাড়তে হয়েছিল। মা-বোনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বাড়িতে যাওয়া হয় না। তারপর থেকে গুরুমার কাছেই থাকেন শিমু। নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে শিমু বলেন, ‘আমাদের ২২ জনের নামে ঘর বরাদ্দ হলেও এ পর্যন্ত ১১টি পেয়েছি। সেখানেই থাকছি সবাই মিলে।’ তিনি বলেন, ‘নিজের ঠিকানা পেয়েছি। এটা আমার কাছে ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দের।’ তৃতীয় লিঙ্গের মৌসুমী খাতুন ঘর পেয়ে ছাগল, হাঁস ও মুরগি পালন শুরু করেছেন। কারও কাছে হাত পেতে খান না। ঘরের সামনে খোলা জায়গায় বাগান করেছেন। সেখানে ফল ও ফুলের গাছের পাশাপাশি তরিতরকারির গাছ লাগিয়েছেন। বললেন, ‘এখন ঈদের মতো আনন্দ লাগছে।’ আলমগীর হোসেন (৫৬) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় ছিলাম। বাপ-দাদার কোনো ভিটে মাটি ছিল না। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে ঘর দিয়েছেন। এ ঘরেই এবার ঈদ করব। জীবনে প্রথম নিজ বাড়িতে ঈদ ভাবতেই ভালো লাগছে।’

উপকারভোগীরা ২ শতাংশ করে জমি পাচ্ছেন। একটি অর্ধপাকা দুই কক্ষের ঘর পাচ্ছেন। থাকছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ। রয়েছে গোসলখানা, টয়লেট ও রান্নাঘর। প্রকল্প এলাকায় প্রচুর গাছ লাগানো হচ্ছে। সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পে একটি পুকুরও রয়েছে। শিশু-কিশোরদের জন্য থাকছে খেলার মাঠ। সব মিলিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক গ্রামের নাগরিক সুবিধাই রয়েছে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বরগুনার ছয় উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে ২৩২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৯৩টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৭২৫টি ঘরের মধ্যে ৪১১টি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় পর্যায়ে ৪১১টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করবেন। এর মধ্যে খাজুরতলায় রয়েছে ৫০টি ঘর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর