বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
দুপুরে হট্টগোল-মারামারি, রাতে ফল ঘোষণা

সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্বে মোমতাজ-দুলাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্বে মোমতাজ-দুলাল

প্রায় দেড় মাস আগে হওয়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে গত রাতে। এর আগে দুপুরে হট্টগোল, ভাঙচুর-মারামারি হয়েছে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে। রাত ১০টায় ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলাল। দ্বিতীয় দফায় গঠন করা নির্বাচন উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ এ ফলাফল ঘোঘণা করেন।

পেশাজীবী সংগঠনের এ নির্বাচনে আওয়ামীপন্থিরা ‘সাদা প্যানেল’ এবং বিএনপিপন্থিরা ‘নীল প্যানেল’ হিসেবে পরিচিত। এবার সমিতির ১৪ পদে সভাপতি-সম্পাদকসহ সাত পদে সাদা প্যানেল ও কোষাধ্যক্ষসহ সাত পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

সভাপতি-সম্পাদক পদ বাদে সাদা প্যানেলের নির্বাচিত প্রার্থীরা হলেন- সহসভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন এবং সদস্য ফাতেমা বেগম, শাহাদাত হোসাইন রাজীব ও সুব্রত কুমার কুণ্ডু। অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও দুটি সহসম্পাদক পদে যথাক্রমে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্যানেল থেকে সদস্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- কামরুল ইসলাম, মাহদীন চৌধুরী, মো. গোলাম আক্তার জাকির ও মো. মঞ্জুরুল আলম সুজন। ঘোষিত ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সদ্যবিদায়ী সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ফলাফল সম্পূর্ণ অবৈধ। আজকে (বুধবার) সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, যারা নতুন এ নির্বাচন উপকমিটি গঠন করেছেন তাদের এ কমিটি গঠন করার কোনো ক্ষমতা নেই। কারণ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিগত কার্যকরী কমিটিতে ১৩ জন সদস্য। সাতজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন উপকমিটি গঠন করা যায় না। এ ফলাফল আমি প্রত্যাখ্যান করছি।’ ফলাফল ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজয়ী সম্পাদক মো. আবদুন নূর দুলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সত্যের জয় হয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলব না, আলহামদুলিল্লাহ। অতি সাধারণ একটা কথা, আমি দলনিরপেক্ষভাবে সমিতি চালাব ইনশা আল্লাহ।’ ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বুথে চলে ভোট গ্রহণ। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উপকমিটি নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করলেও গত দেড় মাসে এ কমিটি ফলাফল ঘোষণা করেনি। এবারের নির্বাচনে মোট ৮ হাজার ৬২৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৯৮৩ জন ভোট দিয়েছেন। ১৫-১৬ মার্চ ভোটের পর ১৭ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টায় ভোট গণনা শুরু হয়। তবে সম্পাদক পদে ভোট গণনায় ত্রুটির অভিযোগ আনেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। ওইদিন মাঝরাতে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন করেন সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রর্থী মো. আবদুন নূর দুলাল। একপর্যায়ে ফলাফল ঘোষণা না করেই স্থান ত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির সদস্যরা। এর এক দিন পর জানা যায় এ ওয়াই মশিউজ্জামান নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী দাবি করেন, তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি।

পরে সমিতির সভাপতি-সম্পাদকদের নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের উদ্যোগ নেন বিগত কমিটির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল। তার পরও সমাধান না আসায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সামতির সাবেক নেতা অজি উল্লাহ ঘোষণা দেন, সাত সদস্যের নতুন নির্বাচন উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি বুধবার ভোট পুনর্গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করবে। তবে এ উপকমিটিকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে গতকাল দুপুরে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এরপর বিকালে মো. অজি উল্লাহ নেতৃত্বাধীন ‘নির্বাচন উপকমিট’ ভোট পুনর্গণনার জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ কক্ষেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ব্যালটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা আছে। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা তালা ভেঙে কক্ষে ঢুকে পড়েন। তখন কক্ষের বাইরে থাকা বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন। তখন কক্ষের ভিতরে-বাইরে থাকা আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বিদ্যুৎ চালু করতে গেলে হাতাহাতি, কিলঘুষির ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষকেই এ সময় পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দেখা যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সরে গেলে ভোট গণনা শুরু করে অজি উল্লাহর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন উপকমিটি। এরপর রাত ১০টায় ফল গোষণা করেন মো. অজি উল্লাহ।

সর্বশেষ খবর