বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

জনগণের দিকে বিএনপির দৃষ্টি থাকে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের দিকে বিএনপির দৃষ্টি থাকে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে প্রতিষ্ঠিত পার্টি। জনগণের দিকে তাদের দৃষ্টি থাকে না। ক্ষমতার লোভটাই তাদের বড়।

গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচসংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর এবং ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর কমলাপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তবে মাঝেমধ্যে বিপত্তি আসে, এটাও দুঃখজনক। যখন আমরা নতুন কোচ-লোকোমোটিভ কিনলাম, তখন বিএনপি শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। সব থেকে দুঃখজনক, নতুন রেলগুলো যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে, সেই রেলে আগুন দেওয়া হলো। তিনি বলেন, বহু রেললাইন, রেল কোচ, রেল ইঞ্জিন বিএনপি পুড়িয়ে দিয়েছিল। এটা নাকি তাদের আন্দোলন। আমি জানি না, মানুষকে পুড়িয়ে বা চলন্ত বাস-গাড়ি অথবা রেলে-লঞ্চে আগুন দিয়ে এটা কোন ধরনের আন্দোলন। এটা তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। শেখ হাসিনা বলেন, রেলে আমাদের লোকবলের অভাব আছে। লোকবল বাড়াতে হবে। সেজন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা দ্রুত কার্যকর করা উচিত। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ করার জন্য রেল মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতার যে অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বা বাঙালি জাতির জন্য সেটা আমাদের দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেই তাঁর নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না এবং সেটাই আজ প্রমাণিত সত্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কদিন পর ঈদ। ঈদে আমাদের চলাচল আরও বাড়বে। আজ (গতকাল) যে নতুন লোকোমোটিভ চালু হতে যাচ্ছে, এর মাধ্যমে দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে-সহজভাবে ঈদের উৎসবে যোগ দিতে পারবে। নিজের আপন ঘরে ফিরতে পারবে। তিনি বলেন, রেলও আজ লাভবান প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে লোকবল আরও ভালোভাবে দিতে পারলে, লাইনগুলো সম্প্রসারিত করতে পারলে এবং নতুন নতুন যে লাইন করছি সেগুলো চালু হয়ে গেলে আমি মনে করি এটা আরও লাভবান হবে। রেলে যারা কাজ করেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে করেন। দেশের অনেক রুটে নতুন করে ট্রেন চালু হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন আবার চালু করতে পেরেছি। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল এখনো রেললাইন দেখেনি। সেসব এলাকায় রেললাইন স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। আমাদের মাটি অনেক নরম। এটা বিবেচনা করে কীভাবে, কতটুকু জায়গায় রেললাইন করা দরকার সেগুলো আমরা বিবেচনা করেছি। তিনি বলেন, দেশের যোগাযোগব্যবস্থা সুন্দর করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সচল করা, আরও উন্নত করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের ব্রডব্যান্ড চালু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। যার ফলে এখন অনলাইনে কেনাবেচা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা সবকিছু আমরা করতে পারছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগও আজ উন্নত হয়েছে।

মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ : লাভ নয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে কতটুকু সেবা দিল সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সেবা করাটাই হচ্ছে আমাদের কাজ। যে কারণে একসময় (বিএনপি আমল) বলা হয়েছিল বিআরটিসি বন্ধ করে দেওয়া হবে, কারণ এটা লাভজনক না। সরকারি প্রতিষ্ঠান কতটুকু লাভ করল, কতটুকু লাভ করল না, সেটার চেয়ে বড় কথা মানুষের সেবা কতটুকু দিতে পারল। তিনি বলেন, মানুষ কতটুকু সেবা পেল। মানুষের জীবনমান কতটা সহজ হলো সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। বিএনপি আমলে রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারে রেল। আবার মানুষ যাতায়াতও করতে পারে রেলে অল্প খরচে। দুঃখের বিষয় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত আমাদের বিআরটিসি বন্ধ করার পরিকল্পনা, রেল বন্ধ করার পরিকল্পনা এসব পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ১০ হাজার কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখন আমরা চেষ্টা করেছি এ রেলকে আবার নতুনভাবে গড়ে তোলা এবং মানুষের যোগাযোগব্যবস্থাকে সুগম করার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ও বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টকের ওপর অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বিভিন্ন দূতাবাস-মিশন ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর