বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রিমান্ড শেষে কারাগারে বিএনপি নেতা

হেলমেটধারীরা সন্ত্রাসী : ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গতকাল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। আদালত সূত্র বলছে, নিউমার্কেট থানায় করা মামলায় ২৩ এপ্রিল বিএনপি নেতা মকবুলকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল পুলিশ তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে। পুলিশ মকবুলকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। মকবুল নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  এর আগে ১৮ এপ্রিল রাত ও ১৯ এপ্রিল দিনভর ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউমার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত হন। উভয় পক্ষে আহত হন অর্ধশতাধিক। এ সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও জখম করার অভিযোগে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বিএনপি নেতা মকবুলকে। জানা গেছে, মার্কেটের ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুটি দোকানের কর্মচারীদের বাগবিতণ্ডা থেকে ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ নেওয়া। তবে তিনি নিজে কোনো দোকান চালাতেন না।

হেলমেটধারী সবাই সন্ত্রাসী : এদিকে হেলমেটধারী সবাই সন্ত্রাসী। অপরাধের  ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। হেলমেটধারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। মাহবুব আলম বলেন, ‘হামলাকারীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তারা ছাত্রলীগেরও কেউ নয়। কেউ নিজে থেকে পরিচয় দিলে সেটা ভিন্ন কথা। তবে ওই সংঘর্ষে যারা হেলমেট পরে মাঠে নেমেছিল তারা সবাই সন্ত্রাসী। তাদের সবাইকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে। সংঘর্ষে নাহিদ হোসেন ও মুরসালিন হত্যায় দায়ের দুটি মামলায় তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে নাহিদ হত্যার মামলায় অনেককে শনাক্ত করা গেছে। তবে ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। অনেকে আত্মগোপনে আছে। তাদের ধরতে একাধিক গোয়েন্দা পুলিশের টিম অভিযান চালাচ্ছে।’ এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ‘নাহিদ হত্যা মামলার আসামিদের শনাক্ত করা গেলেও মুরসালিন কীভাবে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংঘর্ষে ইটের আঘাতেই মারা গিয়ে থাকতে পারেন তিনি। তবে পুরো ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ চলে এসেছে। খুব শিগগিরই সব আসামিকে  গ্রেফতার করা যাবে।’ সোমবার ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের দুই কর্মীর বিতণ্ডা মীমাংসা করতে গিয়ে নিজেরাই সহিংসতায় জড়ান ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। পরে ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা একযোগে ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ঢাকা কলেজ বনাম ব্যবসায়ীতে রূপ নেয়। এ সংঘর্ষের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মোট পাঁচটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি।

কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি : নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে সহিংসতার এক সপ্তাহ পর ছাত্রদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে এখনই মামলা করার কথা ভাবছে না কলেজ প্রশাসন। ঢাকা কলেজের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অখিল চন্দ্র বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এটিএম মইনুল হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের সঙ্গে আমাদের ছাত্রদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন কলেজ বন্ধ। পরবর্তীতে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।

সর্বশেষ খবর