শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোগান্তি নিয়েই বাড়ি ফেরা

মহাসড়কে যানবাহনের চাপ, গরমে দুর্ভোগ, ট্রেনে ভিড় বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোগান্তি নিয়েই বাড়ি ফেরা

ট্রেনে উঠতে গতকাল লড়াই -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদযাত্রায় সেই ভোগান্তি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও সূচি মেনে চলতে পারেনি ট্রেন; পরিবার আর গাট্টি-বোঁচকা নিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এসে যাত্রীদের রোজা আর গরমের মধ্যে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। সকাল থেকে সাভার ও আশুলিয়ার প্রধান সড়কগুলোতে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট ও ভ্যাপসা গরমে নাকাল ঘরমুখো মানুষ। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে বাড়িতে যাচ্ছেন অনেকে। বাড়তি ভাড়া আর গাড়ির জন্য অপেক্ষার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে গতকাল যাত্রী ও যানবাহনে চাপ কম ছিল। 

দ্বিতীয় দিনেও দেরিতে ছাড়ছে ট্রেন : সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল গতকাল সকাল ৭টায়। ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের কিছু সময় পর। ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে নীলসাগর এক্সপ্রেসের নীলফামারীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে যাত্রা শুরু করে সেই ট্রেন। ভোর ৬টায় মহানগর এক্সপ্রেসের চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেটিও স্টেশন ছাড়ে নির্ধারিত সময়ের পরে। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দেরি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ছেড়ে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত ‘বড় ধরনের’ শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা এবং কমলাপুরের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুটা বিলম্বে ঢাকায় এসেছে। আবার ৩০ মিনিটের মধ্যেই আমরা ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে দিয়েছি। আসলে অন্য সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি যাত্রীর চাপ রয়েছে এই ট্রেনে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভোগান্তি : পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। সকাল থেকে সাভার ও আশুলিয়ার প্রধান সড়কগুলোতে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট ও ভাপসা গরমে নাকাল ঘরমুখো মানুষ। সাভার  ট্রাফিক পুলিশ জানায়, মানুষ এখন দল বেঁধে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন। সামান্য যানজট হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। গন্তব্যে পৌঁছাতে গাদাগাদি করে গণপরিবহনে ওঠায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। যানজটে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে কয়েক গুণ বেশি। সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষমাণ ঘরমুখো মানুষের চাপ ছিল। বাস, মিনিবাস, সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ির দ্বিগুণ চাপ ভাড়াও বাড়তি : ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে বাড়িতে যাচ্ছেন অনেকে। তবে বাড়তি ভাড়া আর গাড়ির জন্য অপেক্ষার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মদনপুর, কেওডালা, মোগরাপাড়াসহ মেঘনা টোলপ্লাজা থেকে যানবাহনে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন অনেকেই।

এ সড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশে ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অন্য সময়ের তুলনায় যানবাহনের দ্বিগুণ চাপ লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী যানের সংখ্যা বেশি। একই অবস্থা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত।

যানবাহনের চাপ বাড়ছে : ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ গতকাল বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হয়েছেন। এই নৌরুটে ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পাটুরিয়া ঘাটে ছোট গাড়ি ছাড়া বড় গাড়ির চাপ তেমন হয়নি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়েছে অনেক। বিকালের দিকে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। বিকালের দিকে লঞ্চেও সাধারণ যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পায়। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২১টি এবং আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে চারটি ফেরি চলাচল করছে।

২৪ ঘণ্টা ছয়টি ফেরি চলবে : বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ছয়টি ফেরি চলাচল করবে। জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে শুক্রবার থেকে ছয়টি ফেরি এবং মাঝিরকান্দি-শিমুলিয়া রুটে চারটিসহ উভয় রুটে ঈদের আগে ও পরে ১০টি ফেরি চলবে।

চাপ কম দক্ষিণ পাড়ে : ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ। ঈদ করার উদ্দেশ্যে আগেভাগে রওনা দিয়েও নির্বিঘ্নে পদ্মা পাড়ি দিতে পারেননি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোকজন। গতকাল সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছিল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। তবে দুপুরের পরে যাত্রী চাপ কম ছিল। সকালের যাত্রীর চাপের সেই প্রভাব পড়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের মাঝির ঘাটেও।

ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরবেন ঈদযাত্রীরা :  নৌপথে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হলেও ঈদযাত্রা সামনে রেখে তেমন কোনো বাড়তি প্রস্তুতি নেই নৌযানগুলোতে। ধারণক্ষমতার তিন-চারগুণ যাত্রী হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের লাখ লাখ যাত্রী ঈদে বাড়ি ফিরলেও তাদের জানমালের নিরাপত্তায় বরাবরের মতোই উদাসীন মালিকরা। মাঝনদীতে অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার মতো লাইফ বয়ারও ব্যবস্থা নেই বিশাল আকারের যাত্রীবাহী নৌযানগুলোতে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ : ঈদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া প্রান্তে আসছেন। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের পাটুরিয়া প্রান্ত থেকে বাসে করে ফেরি পার হওয়া যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি হয়নি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ফেরি থেকে নেমে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন এসব যাত্রী ও চালকেরা। তবে ভেঙে ভেঙে লঞ্চে ও ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে দৌলতদিয়া আসার পর ভোগান্তিতে পড়ছেন। মহাসড়ক দিয়ে তিন চাকার যানবাহন চালাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তারাই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছেন। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত ত্রি-হুইলার (মাহেন্দ্র) দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর