শনিবার, ৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনায় মৃত্যু নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড ১৯-এ কতজন মারা গেছেন তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় ছিল পুরো বিশ্ব। গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশের পরই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কারণ বিভিন্ন দেশ করোনায় মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে, তার তুলনায় এই রিপোর্টে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।

ভারত এটাকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশ এখনও এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যে বিজ্ঞানীরা এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন তারা শুধু করোনার কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা ধরেন নি, করোনা হওয়ার পর তার প্রভাবে আক্রান্তদের শরীরে অন্য রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও ধরেছেন। সে জন্যই সরকারি হিসাবের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিপুল ফারাক দেখা যাচ্ছে। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দেশগুলো যে তথ্য দিয়েছিল, তার সঙ্গে স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং যোগ করে এই সংখ্যা পাওয়া গেছে।

দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বলে দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)। গত বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৯ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

১৬ দিন ধরে করোনাভাইরাসে মৃত্যুশূন্য রয়েছে দেশ। আর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৭২ জন। ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশে মৃত্যুর এই সংখ্যা অন্তত ৮৪ হাজার। সংস্থাটির হিসাবে বিশ্বে কভিড-১৯ এ মোট মৃত্যুর দেশগুলোর সরকারের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে তিন গুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার মৃত্যু নিয়ে আমাদের দেওয়া তথ্য ঠিক আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা আমরা জানতে চাইবো। করোনার প্রভাবে অনেক নন কোভিড রোগী চিকিৎসা নিতে পারেনি। কিডনি-ক্যান্সার, হৃদরোগে আক্রান্ত কিছু রোগী মারা গেছে এতে করে কিছু মৃত্যু বাড়তে পারে। চিকিৎসা পায়নি, ভয়ে হাসপাতালে আসেনি সে কারণে হয়ত মৃত্যু বাড়তে পারে। এরা সবাই নন কোভিড রোগী। কিন্তু করোনা রোগীর মৃত্যু নিয়ে আমরা যে তথ্য দিয়েছি সেটা সঠিক আছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিস্তারিত গণমাধ্যমকে জানাবেন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, ভারতে ওই সময়সীমায় করোনায় ৪৭ লাখ মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ওই সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষের। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট ও ভারতের সরকারি অবস্থানের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সরকার যা বলছে, তার থেকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০ গুণ বেশি।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়ে বলেছে, ‘এর সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। এই রিপোর্ট সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও তা প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য।’

ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে দেশে সরকারিভাবে যত মৃত্যুর সংখ্যা জানানো হয়েছে, প্রকৃত মৃত্যু তার চেয়ে ৯৫ লাখ বেশি। প্রকৃত মৃত্যু হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ। এই সময়ে সরকারিভাবে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৪ লাখের কিছু বেশি ছিল। ডব্লিউএইচও বলেছে, পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় মৃতের সংখ্যা কম এসেছে। এমনকি মহামারি-পূর্ব পরিস্থিতিতে প্রতি ১০টি মৃত্যুর মধ্যে গড়ে ছয়টি নিবন্ধিত হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ‘বাড়তি মৃত্যু’ হয়েছে সরাসরি কভিড-১৯ এবং মহামারির পরোক্ষ প্রভাবে। করোনা মহামারি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত না হওয়া রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পাননি। এ কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মৃত্যুর কারণ মহামারির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়া মহামারির সময় যেসব মৃত্যু এড়ানো যেত, সেসব মৃত্যুও এতে যোগ করা হয়েছে। যেমন বিধিনিষেধের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হওয়া মৃত্যু। যদিও সে সময় এসব মৃত্যুর ঝুঁকি কম ছিল। ডব্লিউএইচও বলেছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল এ বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছে। তারা সরকারিভাবে দেওয়া তথ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছে। একই সঙ্গে তারা পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর