রবিবার, ৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপি কি ভোটে যাবে

♦ তৃণমূলে দুই নির্দেশনা হাইকমান্ডের ♦ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। আমরা দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি : ফখরুল

শফিউল আলম দোলন

বিএনপি কি ভোটে যাবে

নির্দিষ্ট দুটি লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। একটি হলো নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রস্তুতি। সে লক্ষ্যে ছক কষছে দলীয় হাইকমান্ড। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন হাইকমান্ডের বার্তা।  তবে বিএনপি ভোটে যাবে কিনা এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করব। তারপর জাতীয় নির্বাচন। সে জন্য সব প্রস্তুতিও আমাদের আছে। বর্তমান অবৈধ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। প্রায় একই কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক দল, অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। কিন্তু বর্তমান ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের অধীনে নয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। দলের অন্য নীতিনির্ধারক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। সে দাবি আদায়ের পরই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের মাধ্যমে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নির্বাচনী এলাকায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও উপহার সামগ্রী বিতরণসহ নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যও তুলে ধরছেন তারা। ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টারে ছেয়ে গেছে প্রতিটি এলাকা। নেতাদের সক্রিয় ভূমিকায় তৃণমূলে ফিরে আসছে চাঙাভাব। তৃণমূলে দেওয়া হাইকমান্ডের বার্তায় রয়েছে, ‘দুই মাসের মধ্যে সব কমিটি পুনর্গঠন শেষ করা হবে। অপেক্ষা করুন, চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক আসছে।’  এর আগে রমজানে কেন্দ্র থেকে শুরু করে দেশের চল্লিশটিরও বেশি সাংগঠনিক জেলায় দলীয় ইফতার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। নির্দেশনা অনুসারে নিজ এলাকায় ঈদ-উৎসব পালনের চেষ্টা করেছেন নেতা-কর্মীরা। গেল রমজান থেকে ঈদ-উৎসব পর্যন্ত সব কিছুতেই ছিল ‘নির্বাচনী রাজনীতি’। একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক এলে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন নেতারা। এত দিন আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অনেকটা অন্ধকারে থাকলেও এবার তারা স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, রমজান মাসে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, সিলেট, জামালপুর, জয়পুরহাটসহ অন্তত ৪০টি সাংগঠনিক জেলার ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক দিনে একাধিক ইফতারে অংশ নেন তিনি। সব ইফতার মাহফিলেই দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে দলের অবস্থান তিনি তুলে ধরেন।

গাজীপুর জেলার কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, দলীয় কর্মী-সমর্থক ছাড়াও নেতারা এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টারে লেখা আছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঈদের পর এলাকায় বিয়ে, খেলাধুলাসহ সামাজিক নানা কাজ ও অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তারা। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ নিজের জন্য দোয়া চাচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন দলীয় হাইকমান্ডের বার্তা। ঈদের আগে গাজীপুর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটির নেতারা কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। ফাঁকা সড়কে মোটরসাইকেল শোডাউন করছেন। সামনে নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার চেষ্টা করছেন।

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার স্বপ্নতরী নামে একটি রেস্তোরাঁয় প্রতিদিনই বিকালে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আড্ডা দিচ্ছেন। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরেও চায়ের দোকানগুলোতে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। গাজীপুর ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীরা এলাকায় নানাভাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বুধবার দুপুরে এবং পরের দুই দিন চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে নিজ বাসভবনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, দলীয় নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এসব অনুষ্ঠানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কথা জানান তিনি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা রাকিবুল ইসলাম বকুল। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘জাতীয় সরকারের’ কনসেপ্ট দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ খুবই পছন্দ করেছেন। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকাসহ (কিশোরগঞ্জ-৬) জেলার বিভিন্ন স্থানে ইফতার মাহফিল করেছি, সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রচার করেছি। সাধারণ মানুষ তা আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।  বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরো রোজার মাসেই ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির ইফতার পার্টি ছিল। নেতা-কর্মীদের এ বার্তাই দিয়েছি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি আসবে। সেই কর্মসূচিতে সবাইকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর