সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি

বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই : প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি

দ্রুত শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ভারতের অন্ধ্র ও ওডিশা উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। গতকাল বেলা ২টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার। তবে ঝড়টি যেকোনো সময় গতি বদলাতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের দিকেও মুখ করে এগোতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, মোটামুটি প্রস্তুতি আছে। আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। অন্য্যদিকে আবহাওয়া অধিদফতর দেশের চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা এবং কক্সবাজার উপকূলকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানে ও উপকূলের কাছাকাছি স্থানে চলাচল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে মেঘ আর বৃষ্টি বঙ্গোপসাগরের দিকে যাচ্ছে। যে কারণে আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে দিনের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে রাজধানীসহ দেশের দু-একটি জায়গায় হালকা বৃষ্টি হলেও তা অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী ছিল। তবে রোদ বেড়ে যাওয়ায় গরমের তীব্রতা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি আসার আগপর্যন্ত আগামী কয়েক দিন গরমের তীব্রতা বাড়তে পারে। এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদফতরের উপপরিচালক ছানাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত শক্তি অর্জন করছে। তবে এর গতিপথ এখন পর্যন্ত ভারতের অন্ধ্র ও ওডিশা উপকূলের দিকে আছে। তবে এটি গতি বদলে যেকোনো সময় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকেও আসতে পারে। যে কারণে আমরা নিবিড়ভাবে ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছি। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ উঠেছে ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। তবে সকালে আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে রোদ ঝলমল করছিল। ঘূর্ণিঝড় অশনি গতকাল দুপুর ১২টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। তাই পায়রাসহ সব বন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ১৫ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, সাইক্লোন প্রস্তুতি প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রামে প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন। এর সঙ্গে আছে ৫১১টি আশ্রয় কেন্দ্র। তাছাড়া আছে রেড ক্রিসেন্টের প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী। মজুদ রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার। 

কলকাতা প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় অশনি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় এ ঘূর্ণিঝড় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হবে। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ফলে আগামীকাল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় উপকূলের আরও কাছাকাছি এলে প্রভাব পড়বে বাংলায়। এর প্রভাবে উড়িষ্যা ও বাংলার উপকূলের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হালকা ঝড়ো হাওয়া এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

‘অশনি’র আঘাত হানার আশঙ্কা নেই : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেদিকে যাচ্ছে এটি যদি সেদিকে ধাবিত হয় তাহলে ভারতের বিশাখাপত্তম, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদ এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অফিস ধারণা করছে, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ১২ মে সকালে বিশাখাপত্তম, ভুবনেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গ স্পর্শ করে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ‘অশনি’র প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি হবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হবে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় যে কোনো সময় যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। এখন এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি যদি মোড় নিয়ে উত্তর দিকে ধাবিত হয়, তাহলে আমাদের দেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আঘাত হানতে পারে। আমরা সবাইকে নিয়ে সভা করেছি, তাদের সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। মাঠে মেনেছেন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা প্রচার করছেন। আমরা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছি। সেগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সেখানে রান্না করা খাবার দেওয়ার জন্য চাল ও অর্থ দিয়েছি। মোটামুটি প্রস্তুতি আছে। করোনার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর