মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

উন্নয়নে অংশীদার হতে চান মার্কিন ব্যবসায়ীরা

দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ-বাণিজ্য বাড়াতে এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই

বিশেষ প্রতিনিধি

উন্নয়নে অংশীদার হতে চান মার্কিন ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গতকাল ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশের উন্নয়নের পথযাত্রায় অংশীদার চান বিশ্বের নম্বর ওয়ান অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। খুব বেশি দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিতে পারেনি। বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর দক্ষতা, সক্ষমতা রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন ঢাকা সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সদস্য ব্যবসায়ীরা। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এতে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর, এফবিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এফবিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ মোমেন, পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর, আবুল কাসেম খান, শমী কায়সার, বাংলাদেশ এনার্জি কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আইয়ুব, বিএবি-এর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ অনেকে। অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রতিনিধি দলের পক্ষে ছিলেন জেরেমি জি স্টুরসিও, ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব গভর্নমেন্ট এঙ্গেজমেন্ট-এশিয়া প্যাসিফিক, ভিসা [করপোরেট পার্টনার], মহেশ পালাশিকার, প্রেসিডেন্ট, জেনারেল ইলেকট্রিক সাউথ এশিয়া, ইউএস চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিদ্ধান্ত মেহরা প্রমুখ। ওই সামিটে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুবর্ণ সময় চলছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান মন্ত্রী। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাই স্পিড ট্রেন, সমুদ্র অর্থনীতি, হাইটেক পার্ক, দেশজুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে বাংলাদেশকে পরবর্তী বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে পারেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অব্যাহতি, ডিউটি ড্র ব্যাকসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সফররত মার্কিন উদ্যোক্তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি টার্মিনাল, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো ওয়্যারহাউস অ্যান্ড কোল্ড চেইন, এভিয়েশন, শিপিং ও বন্দর, অটোমোবাইল, হোটেল ও হসপিটালিটি, ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ম্যান মেড ফাইবার খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। শেভরনের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের মিশন লিড জে আর প্রায়র বলেন, বাংলাদেশ অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। খুব বেশি দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিতে পারেনি। বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর দক্ষতা, সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করতে আগ্রহী। তিনি জানান, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা খুবই আশাবাদী। সে কারণেই প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসেছেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিদ্ধান্ত মেহরা বলেন, বাণিজ্য প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরবে। উন্মুক্ত আলোচনায় এফবিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন ডলার। যা সম্ভাবনার তুলনায় কম। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিনিধি দল কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানান তিনি।

সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল, ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টস আইওটি ও স্বাস্থ্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ভালো সুযোগ রয়েছে।

এফবিসিসিআইর সহসভাপতি এম এ মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সিইপিএ চুক্তি সইয়ের জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি হস্তান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ। বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা নিতে পারেন মার্কিন উদ্যোক্তারা।

ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় জানান, বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি রয়েছে, প্রত্যেকেই খুব মুনাফা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদেরও এই সুযোগ নেওয়া উচিত। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের দাম তুলনামূলক কম বলে জানান বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আমদানির আহ্বান জানান তিনি।

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি জানান, বাংলাদেশের ইউইসএ সার্টিফায়েড অনেকগুলো ফার্মেসি প্ল্যান্ট রয়েছে। এদেশের ওষুধ কারখানাগুলো বিশ্বমানের যন্ত্র দিয়ে সজ্জিত। এ ছাড়াও এ দেশের শ্রমশক্তিও তুলনামূলক সস্তা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে আদর্শ গন্তব্য। এ সময় তুলা আমদানিতে ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিলের আহ্বান জানান বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় : গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় শেষে সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে তাদের নতুন বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে। আমরা ইতোমধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করেছি। আমরা এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ এগিয়ে যাচ্ছি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ সম্পর্কে আমি তাদের অবহিত করেছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বহুমুখী বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা চাই তারা যেন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন। আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের তেমন আগ্রহ ছিল না। এখন অন্যরাও আমাদের দেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী। তাঁরা চাইলে অনেক কিছুই পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর