মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

উপাত্ত সুরক্ষা আইনটি কালো আইনে রূপান্তর হবে

ড. ইফতেখারুজ্জামান

বিশেষ প্রতিনিধি

উপাত্ত সুরক্ষা আইনটি কালো আইনে রূপান্তর হবে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়াটিতে সরকারি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষেত্রেও। আইনের শিরোনামটিও বিভ্রান্ত। প্রায়োগিক দুর্বলতা রয়েছে। ফলে এ আইনটি কালো আইনে রূপান্তর হবে। একই সঙ্গে এটি সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তাই আইনের খসড়াটি ঢেলে সাজাতে হবে। গতকাল ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২ (খসড়া) পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে টিআইবি। এ সময় সংস্থাটির অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন প্রভাষক ড. মোহাম্মদ এরশাদুল করিম। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘উপাত্ত সুরক্ষার এই আইনে পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে এটি সরকারের অন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে এই ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে। তাই এ আইনটি কালো আইনে রূপান্তর হবে। এটি সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তাই এ আইনের খসড়াটি ঢেলে সাজানো উচিত।’ তিনি বলেন, ‘দেশের কোনো কমিশন স্বাধীন হিসেবে কার্যকর নয়। তাই বলে মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দিতে পারি না। সব কমিশন অকার্যকর হতে পারে, কিন্তু ডাটা সুরক্ষার জন্য স্বাধীন কর্তৃপক্ষের হাতে কর্তৃত্ব দিতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির হাতে রাখা যাবে না।’ টিআইবির লিখিত সুপারিশমালায় বলা হয়, বর্তমানে ইন্টারনেট প্রতিবেশ ব্যবস্থায় (Internet ecosystem) যেখানে সব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষাবিষয়ক একটিমাত্র আইন দিয়ে সব ধরনের অবস্থা মোকাবিলা করা সহজ নয় বা চিন্তা করা উচিতও নয়। বরং এটি যথেষ্ট ঝামেলাপূর্ণ কাজ। এরপরও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এ বিষয়ে একটি আইন করার উদ্যোগ গ্রহণকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে দেখা যাচ্ছে, কেবল একটি আইন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে বলেই এই আইনটির একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নের দিকগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। ধারণা করতে অসুবিধা হয় না যে, এর ফলে এটি মূল উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করা অন্যান্য আইন, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর অপপ্রয়োগের মতোই মারাত্মক সমালোচনার জন্ম দেবে। ফলে বেশকিছু মানুষের হয়রানি বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আবারও নষ্ট হবে।’ ড. ইফতেখার বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে এই আইনটি কার্যকর হচ্ছে সেখানে তাদের পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এ ধরনের আইন বাস্তবায়ন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি নতুন। তাই হয়তো একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর আইন চট করে করা যাবে না। এ সমস্যার সমাধানে সে জন্য সর্বক্ষেত্রের অংশীজনদের সঙ্গে বসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি বিষয়গুলো খুঁজে বের করে সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আইনের মধ্যে বিধান অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে বিভিন্ন বিষয়ের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে এ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হবে বলে মনে হয়।’ টিআইবি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেছে, যথাযথ আইনগত কাঠামোর অধীনে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনেক আগে থেকেই নানা ধরনের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এ ধরনের উদ্যোগের পেছনে ব্যক্তির নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত তথ্যের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থার (আঙ্কটাড) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ১৯২ দেশের মধ্যে ১৩৭টি দেশে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বা তথ্যের গোপনীয়তা সম্পর্কে দেশীয় আইন রয়েছে। আঙ্কটাডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এ সম্পর্কিত কোনো আইন নেই। তাই বর্তমানের এই ইন্টারনেটভিত্তিক জীবনব্যবস্থায় যেখানে ব্যক্তিগত তথ্যকে বলা হয় ইন্টারনেটের জ্বালানি বা মুদ্রা, সেখানে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার ব্যাপারটির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ সম্পর্কিত একটি আইন তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় প্রয়াস।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর