মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সৌদি অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশের অনীহা

হজযাত্রী পরিবহনে সেকেন্ড ক্যারিয়ার

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রায় এক যুগ পর বাংলাদেশের হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইনস ছাড়াও সৌদি আরবের অপর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারলাইনস ‘ফ্লাইনাস’। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে হজযাত্রী পরিবহনে এই সেকেন্ড ক্যারিয়ারের অনুমোদন দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে সেকেন্ড ক্যারিয়ারে সৌদি সরকার অনুমতি দিলেও এখনই এ বিষয়ে সম্মতি দিচ্ছে না বাংলাদেশ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এ বছর হজযাত্রী অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় সেকেন্ড ক্যারিয়ারের প্রয়োজন নেই। ওদিকে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় এখনো হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারছে না ধর্ম মন্ত্রণালয়। আর প্যাকেজ ঘোষণা না হলে হজ কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না এজেন্সিগুলো। ফলে সরকার ঘোষিত ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরুর বিষয়টিও পড়েছে অনিশ্চয়তায়। হজ ফ্লাইট শুরুর তারিখ পিছিয়ে জুনে চলে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে হজযাত্রীরা তাদের পছন্দমতো এয়ারলাইনসে সৌদি আরব যেতে পারতেন। ২০১১ সালে হজযাত্রীদের এ সুযোগ বাতিল করে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বা সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সৌদিয়া এয়ারলাইনসে ওই দেশে যেতে বাধ্য করা হয়। দেশের হজযাত্রীদের অর্ধেক বিমানে বাকি অর্ধেক সৌদিয়া বহন করেছে। ১১ বছর ধরে চলা এই নিয়ম এবার ভাঙল সৌদি সরকার। তারা ওই দেশের আরেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারলাইনস ফ্লাইনাসকে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। সৌদি আরবের এ-সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় হয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রবিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে পৌঁছেছে। বেবিচকের কর্মকর্তারা জানান, তারা এরই মধ্যে ফ্লাইনাস এয়ারলাইনসকে ওঠা-নামার অনুমতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্ধেক হারে উভয় দেশের এয়ারলাইনসের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহন করার চুক্তি রয়েছে। ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস সৌদি অংশের অর্থাৎ দেশটির ৫০ ভাগের একটি অংশ পরিবহন করবে। তা ঠিক কত শতাংশ সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান গতকাল নিজ দফতরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার তাদের আরেকটি এয়ারলাইনসকে বাংলাদেশি হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ।’ সৌদির মতো বাংলাদেশেও অন্য কোনো এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার এমনিতেই আমাদের হজযাত্রী কম তাই সেকেন্ড ক্যারিয়ারের প্রয়োজন হবে না। হজযাত্রীর অভাবে ২০১৯ সালে কিন্তু হজ ফ্লাইটে সাধারণ যাত্রীও পরিবহন করার নজির রয়েছে।’ এদিকে হজযাত্রী পরিবহনে সেকেন্ড ক্যারিয়ারের অনুমতি দেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)’। সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফ্লাইনাস এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়ায় হজযাত্রীসহ এজেন্সি মালিকরা উচ্ছ্বসিত। এ সেক্টরে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। আশা করি আগামী বছর বাংলাদেশ সরকারও একাধিক এয়ারলাইনসকে হজযাত্রী বহনের অনুমতি দেবে। এটি করা হলে এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এতে হজ যাত্রার খরচ কমবে এবং সেবার মান বাড়বে।’ এদিকে কোনো কিছু চূড়ান্ত না করেই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। অথচ সরকার এখনো হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করতে পারেনি। প্যাকেজ ঘোষণার পর পর্যায়ক্রমে হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধন, প্রধান এজেন্সি নির্ধারণ, মোনাজ্জেম নির্ধারণ, হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আবাসন ও মোয়াল্লেম ফির অর্থ সৌদি আরবে পাঠাতে হয়। এ ছাড়া সৌদি মোয়াল্লেম নির্ধারণ, বাড়ি ভাড়া, ক্যাটারিং সার্ভিস, গাড়ির চুক্তিসহ অন্যান্য কাজ শেষ করতে হয়। এসব কাজ শেষে ভিসা ইস্যু করে হজ ফ্লাইটের ঘোষণা দিতে হয়। হজ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে ফ্লাইট শুরুর আগে ৬ থেকে ৭ মাস সময় পাওয়া যেত। সেখানে এবার এক মাসের কম সময় আছে। এ অবস্থায় আগামী ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু না করে তা আরও ১০ দিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে হাব। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। সরকার ঘোষিত তারিখেই হজ ফ্লাইট শুরু হবে কি না- এমন প্রশ্নে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘সৌদির কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্য না মেলায় এখনো আমরা হজ প্যাকেজ ঘোষণা দিতে পারিনি। হজ প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় হজের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ফলে ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব নাও হতে পারে।’ তবে হজযাত্রী পরিবহনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব হজ কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।’ এদিকে সৌদি সরকারের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ এবার হজে যেতে পারবেন না। বয়সসীমা পেরোনো নিবন্ধিত ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্য তার পরিবর্তে হজে যেতে পারবেন। এমন শূন্য কোঠায় হজে যেতে প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করে আবেদন করার সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে। এ ধরনের ব্যক্তির সংখ্যা ১০ হাজার ৪৫৪ জন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন। পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে ৯ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর