অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য এম এ কাসেমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলার দ্রুত সুরাহা ও অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলার আসামি করা হয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, ট্রাস্টির সদস্য এম এ কাসেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউসিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী। তিনি বলেন, আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের কারণেই নর্থ সাউথ পরিণত হয়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে। অভিযুক্তরা যেন আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারেন, তাদের বিচারের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে বলা হয়, আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কতিপয় সদস্যের অনুমোদন-সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯০৯৬.৮৮ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ অপরাধজনকভাবে প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন, পরে বিক্রেতার নিকট থেকে নিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেন। নর্থ সাউথের ট্রাস্টি সদস্য আজিজ আল কায়সার টিটুর নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. সুফী সাগর সামস। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, সিন্ডিকেট আর জঙ্গিবাদে পর্যুদস্ত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। একের পর এক অনিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানও নিম্নমুখী। নর্থ সাউথ জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাস্তবে তারা জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার খোলস থেকে বের হতেই পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনহীন বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয় অনিয়ম, ডেভেলপার্স কোম্পানি থেকে কমিশন গ্রহণ, ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি সদস্যের বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, ১ লাখ টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও জঙ্গি মদদ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে বলে জানান সুফী সাগর সামস। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ ও এম এ কাসেম সিন্ডিকেটের হাতে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই যেন জিম্মি- উল্লেখ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য এ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু একাডেমির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মিজি, আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের সদস্য ফররুখ আহমেদ খসরু, হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
