বুধবার, ১১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিম্ন আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে ভর্তুকি বাড়ানো উচিত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নিম্ন আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে ভর্তুকি বাড়ানো উচিত

করোনার প্রকোপ কমার পর বিশ্বের কয়েকটি দেশে আবার নতুন করে এ মহামারিটির সংক্রমণ বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চয়তা। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ছে হুহু করে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় চলছে তুলকালাম। টিসিবির ট্রাকের পেছনে লম্বা হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের লাইন। এ পরিস্থিতিতে আসছে বাজেটে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় চাপে পড়েছে মানুষ। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

নাগরিক প্ল্যাটফরমের কনভেনর ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করেন, মূল্যস্ফীতির বাইরেও বাজেটে আরও দুটি বিষয়ে এবারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এর একটি হলো নিম্ন আয়ের মানুষকে দ্রব্যমূল্যের চাপ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভর্তুকি বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগী হওয়া।

আগামী বাজট সামনে রেখে ‘কেমন বাজেট চাই’ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের এই প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক বলেন, এবারের বাজেটের দুটি মূল লক্ষ্য থাকা উচিত। একটি হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। এজন্য বাজেটে কর-শুল্কের দিক থেকে, সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগর দিক থেকে কী কৌশল গ্রহণ করা হয় সেটাই সবার দেখার বিষয়। দেবপ্রিয় বলেন, কাগজে-কলমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ আছে- এটি শুধু বাজেটে তুলে ধরলে হবে না; এটার কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা-ও স্পষ্ট করতে হবে। শুল্ক-করের উদ্যোগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কমানোর বিষয় আছে, তেমনি দেশি শিল্পকে সহায়তা দিতে হবে। বিশেষ করে বাজারে পণ্যের জোগানের দিকটাকে শক্তিশালী করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা যারা আছেন তাদের সহায়তা দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত হলো, যেসব পণ্য আমদানি নীতিতে আছে, বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানি সহজ করে বাজারের ঊর্ধ্বগতি সামাল দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট একটি প্রাগৈতিহাসিক অর্থনৈতিক চিন্তা। এখন আমরা যে এসডিজি যুগে বসবাস করি, সেখানে শোভন কর্মসংস্থান হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। এজন্য বাজেটে প্রাক্কলন থাকা উচিত। প্রতি বছর যে জনশক্তি শ্রমবাজারে আসছে, তাদের মধ্যে কতজন সরকারি খাতে, কতজন বেসরকারি খাতে এবং কতজন স্বনিয়োজিত হবে এর একটা লক্ষ্য ঘোষিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রতি বছর যে ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে তার মধ্যে কতজনের দেশে আর কতজনের বিদেশে কর্মসংস্থান হবে তারও প্রাক্কলন থাকতে হবে। এসব লক্ষ্য বা প্রাক্কলন অর্জিত হচ্ছে কি না ধারাবাহিকভাবে তারও মূল্যায়ন করা উচিত। সিপিডির এই গবেষক বলেন, (করোনা) মহামারি-উত্তর যুগে যেখানে ব্যাপকভাবে আয় কমে গেছে, যেখানে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব বেড়েছে সেখানে এবারের বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দাবি রাখে। যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্য বিশেষ করে খাদ্যপণ্য নিয়ে যে সংকট হচ্ছে তা মোকাবিলায় দেশি উৎপাদন ও বিকল্প উৎস থেকে পণ্য আহরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয়। এ ছাড়া দেশি শিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য উদ্যোগ সম্পর্কে সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, দেশের সব মানুষকে গড় হিসাবে না ধরে, বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকে যেতে হবে। ফলে এবারের বাজেটেও সরকারের ভর্তুকির ব্যাপারটা বড়ভাবে আসবে এমনটাই আশা করেন নাগরিক প্ল্যাটফরমের এই কনভেনর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর