বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জ্বালানি খাতে সাত সুপারিশ টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দশকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও এ খাতে উদ্বেগজনকভাবে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দাতা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী নির্ভরশীল পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি খাতের নীতি-কাঠামো বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট দাতাদের কাছে জিম্মি। মাত্র তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনের অধিক প্রায় ৯৪২ একর জমি ক্রয় কিংবা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে শুধু ভূমি ক্রয়/অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে মোট ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষিজমি, বন, নদী ও খালসহ স্থানীয় আদিবাসী ও লবণ চাষিসহ বিভিন্নজনের জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবাদ সম্মেলনে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে। জ্বালানি খাতে এই অনিয়ম-দুর্নীতি সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তা উত্তরণে সাত দফা সুপারিশ করে সংস্থাটি। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকায় আমদানিনির্ভর প্রযুক্তি দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চীন ও জাপানের পুরনো ও ব্রাউন ফিল্ড বয়লারগুলোকে গ্রিন নামে চালিয়ে দেওয়াসহ উন্নত দেশের উদ্বৃত্ত ও অব্যবহৃত কয়লা প্রযুক্তির ‘ডাম্পিং ক্ষেত্র’ বাংলাদেশ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে।

অনিয়ম দুর্নীতি রোধে টিআইবির সাত সুপারিশ : ১. জ্বালানি খাতে অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে। একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত আইইপিএমপিতে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ২. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করতে হবে এবং ২০২২ সালের পর নতুন কোনো ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন করার ঘোষণা দিতে হবে। ৩. জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন, ঋণের শর্ত নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ-সংক্রান্ত সব নথি প্রকাশ করতে হবে। ৪. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধে চলমান ঝুঁকিপূর্ণ কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে। ৫. আইএনডিসির অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিকল্পনাধীন কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে সোলারসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয়-সংক্রান্ত কার্যক্রমে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে। ৭. প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর