শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই । আবু আহমেদ

ঘাটতি বাজেট থেকে দূরে থাকা উচিত

আলী রিয়াজ

ঘাটতি বাজেট থেকে দূরে থাকা উচিত

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, সারা দুনিয়ার অর্থনীতি এখন নিম্নগামী। করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও উৎপাদন পর্যায়ে সংকট কাটানো দুনিয়ার কোনো দেশই স্বাভাবিক হতে পারেনি। চাহিদার সমান মুদ্রা ব্যবস্থায় বেশিরভাগ দেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। তাই আগামী বছরের বাজেট করার সময় বিষয়গুলো চিন্তায় রাখতে হবে। সরকারের উচিত হবে ঘাটতি বাজেট থেকে দূরে থাকা। ঘাটতি যত কম হবে, অর্থনীতির ওপর চাপ তত কম পড়বে। তবে এই ঘাটতি মেটাতে গরিব মানুষের ওপর চাপ কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না। তাতে ফল উল্টো হবে।  বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আবু আহমেদ আগামী বাজেট সম্পর্কে নানা কথা বলেন। তিনি বলেন, এ বছর বাজেট হবে অবশ্যই ভিন্ন ধরনের। বাংলাদেশ সম্ভবত করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে। ফলে অর্থনীতির বেশিরভাগ খাত স্বাভাবিক  উৎপাদনে ফিরেছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা সুখবর। তবে মনে রাখতে হবে রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বাড়ছে তীব্র গতিতে। রপ্তানির সুখবর থাকলেও আমদানির দায় মেটাতে ঘাটতি কিন্তু থেকেই যাবে। তাই উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার ভর্তুকি দিয়ে দেশ চালাতে পারে না। দীর্ঘদিন এভাবে চলে না। যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে সেসব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামান্য একটি রেলের ঘটনা বা বিমানবন্দরের ঘটনা দেখলাম। কীভাবে চলছে। তার মানে কোনো নিয়মনীতি নেই। অথচ সরকার এই দুটি প্রতিষ্ঠান চালাতে ভর্তুকি দেয়। কেন কার স্বার্থে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। নিয়মনীতি না থাকলে কখনই এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফায় আসবে না। দুনিয়ার সব দেশে বিমানবন্দর বেসরকারি ভিত্তিতে চলে। সেখানে নীতিমালা করে চলে। আমাদের এখানে বছরের পর বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে সবচেয়ে খারাপ সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এভাবে বিনা কারণে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। সেসব বন্ধ হওয়া উচিত। আবু আহমেদ বলেন, কৃচ্ছ্র সাধনের বাজেট হতে হবে। ধার করে ঘি খাওয়ার  স্লোগান ভুলে যেতে হবে। বিদেশি সংস্থা থেকে ঋণ নেব বড় বড় প্রকল্প করব, আর উন্নয়ন হয়ে যাবে এসব চিন্তা কোনোভাবেই করা যাবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়ে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। উন্নতি করতে হলে দেশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কর ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। মানুষকে সেবা দিতে হবে কর আদায় করতে হবে। এখানে কর আদায় করতে চায় তবে সেবা দিতে চায় না। লুটপাটের চিন্তা কাজ করে সবার আগে। সরকার ভ্যাট মেশিন দেবে। কিন্তু কেউ এই ভ্যাট মেশিন ক্রয় করেনি। কোনো উপজেলা শহরে ভ্যাট মেশিন নেই। তাহলে কর আদায় কীভাবে হবে? তিনি আরও বলেন, গরিব লোকের অসুবিধা হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত বাজেটে থাকতে পারবে না। সোশ্যাল সেফটি নেট বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়াতে হবে। সারা পৃথিবীতে খাদ্য পণ্যের দর বাড়ছে। ভবিষ্যতে খাদ্য পণ্যের দর আরও বাড়তে পারে। ইউরোপজুড়ে অস্থিরতা ছাড়াও উৎপাদনে প্রক্রিয়ায় সংকট রয়েছে। তাই দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিয়ে টিসিবি বা খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে সবার কাছে  ভোগ্যপণ্য পৌঁছাতে হবে এবং সেটা বাড়াতে হবে। মন্ত্রী, এমপি, সচিব, শীর্ষ কর্মকর্তারা বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যান। তাদের এসব ভ্রমণে লাগাম টানতে হবে। তারা নিজেদের পকেট থেকে খরচ করে গেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়। তাই এ জাতীয় বিলাসী খরচের লাগাম টানতে হবে কঠোর ভাবে। প্রয়োজনে গাড়ি আমদানি আপাতত বন্ধ করা উচিত। দেশে অস্থিরতা থাকলে পাচার বেড়ে যাবে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেবে। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে সরকারকে খরচের হিসাব করতে হবে। এ ছাড়া করপোরেট কর আহরণের জন্য স্টক মার্কেটে লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সরকারের কিছু সুবিধা বাড়ানো উচিত। কারণ সরকারের করপোরেট আয়করের ৮০ শতাংশ আসে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মাধ্যমে। তাই এটা বাড়াতে হলে কোম্পানিগুলোকে কিছু সুবিধা দিলে রাষ্ট্রের কর আদায় বাড়বে।

সর্বশেষ খবর